ঢাকা: বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় স্থাপিত বর্ডার হাটগুলোতে উভয় দেশের মানুষের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এজন্য সরকার গুরুত্বসহকারে প্রক্রিয়াধীন ১২টি বর্ডার হাট নিয়ে কাজ করছে।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন নতুন তিনটি বর্ডার হাট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে মোট ১৬টি বর্ডার হাট নিয়ে কাজ চলছে। এরমধ্যে চারটি চালু আর ১২টি প্রক্রিয়াধীন। পর্যায়ক্রমে এগুলোও চালু হবে। এরমধ্যে তিনটি বর্ডার হাট আগামী মার্চ মাসে চালু হতে পারে। নতুন বর্ডার হাটগুলোর মধ্যে একটির রোড এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। সেটা হলো সিলেটের ভোলাগঞ্জ আর মেঘালয়ের ভোলাগঞ্জ। বাংলাদেশ ও মেঘালয় সীমান্তের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সায়দাবাদ ও মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি পাহাড় সংলগ্ন নালিকাটা, মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলসের রিংকু ও সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজারের বাগানবাড়ি। আগামী মার্চেই এ হাটগুলো উদ্বোধন করা হতে পারে।
এছাড়া বর্তমানে চারটি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। এগুলো হলো- কুড়িগ্রামের বলাইমারি বর্ডার হাট ও মেঘালয়ের কালাইচর, সুনামগঞ্জের লাউয়াঘর ও মেঘালয়ের বালাট। ফেনীর পূর্ব মধুরাম বর্ডার হাট ভারতের শ্রীনগর ত্রিপুরার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারাপুরে ও ভারতের কমলা সাগর ত্রিপুরায়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে ভারতের সঙ্গে আমাদের চারটি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। আরও তিনটা হাট চালুর অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করছি যদি করোনা পরিস্থিতি ভালো হয় তাহলে মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে এ তিনটি হাট চালু করতে পারবো। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আমাদের মোট ১৬টি বর্ডার হাট নিয়ে কাজ করছি। তার মধ্যে চারটা হাট অপারেশনে রয়েছে। এছাড়া ১২টা বর্ডার হাটের মধ্যে তিনটা প্রস্তুত। আরও তিনটা বর্ডার হাটের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এছাড়া আরও ছয়টা বর্ডার হাট আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার জন্য আমরা সব কিছুতে পিছিয়ে যাচ্ছি। সব প্রস্তুত করেও করোনার জন্য চালু করতে পারছি না নতুন তিনটা বর্ডার হাট। আমরা প্রস্তুত আছি, তিনটা বর্ডার হাট যেকোন সময় চালু হতে পারে।
জানা গেছে, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে বর্ডার হাট স্থাপিত হচ্ছে। এতে বাণিজ্যেরও উন্নতি হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সীমান্তবর্তী মানুষ হাতের নাগালে পাবে। সীমান্তে চোরাচালান কমে আসবে। স্থানীয়রা নানা পণ্য হাট থেকে কিনতে পারবে। এতে দু-দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বও বাড়বে। এছাড়া পর্যটনের ক্ষেত্রেও প্রসারতা লাভ করবে।
এজন্য ভবিষ্যতে নতুন করে যেসব এলাকায় বাংলাদেশ-ভারতের বর্ডার স্থাপিত হতে পারে তা হচ্ছে- কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঘোলাশালা ইউনিয়নের জগমোহনপুর গ্রাম, কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষ্ণপুর গ্রামের দক্ষিণ অংশ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের সীমানা পিলারের মধ্যবর্তী স্থান, নওগাঁর সাপাহার শিরন্টি মৌজার খঞ্জন সীমান্ত, নওগাঁর ধামইরহাট কালুপাড়া মৌজার কালুপাড়া সীমান্ত, নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার শীতলবাজার সীমান্ত, রাধানগর মৌজার সীমান্ত, শাওলি সীমান্ত, তালতলা পাড়া শাওলি সীমান্ত, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট গাজীর ভিটা ইউনিয়নের উত্তর নলকুড়া সীমান্ত, ঝিনাইদহের মহেশপুর যাদবপুর ইউনিয়নের গোপালপুর মৌজা, নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুর বিজয়পুর সীমান্তে।
সীমান্ত হাটের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুড়িগ্রাম জেলার বালিয়ামারি সীমান্তে সোনাভরি নদের তীরে। উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চাঙ্গা করে একদিকে তাদের জীবিকার সংস্থান করা এবং অন্যদিকে তাদের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন। এর আর একটি উদ্দেশ্য ছিল দুদেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, ভালোবাসা এবং ভাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ১০টি বর্ডার হাট রয়েছে। এটি ২২টিতে পর্যায়ক্রমে উন্নীত করা হবে বলে দু-দেশের বর্ডার হাট স্মারক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সমঝোতা অনুযায়ী বর্ডারহাটে কেনা-বেচা হওয়া পণ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে- স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সব পণ্য, শাড়ি, হস্তশিল্পজাত পণ্য ও স্টেশনারি। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা চানাচুর, চিপস, আলু, তৈরি পোশাক, শুঁটকি, সাবান, শিম, সবজি, গামছা ও তোয়ালে, কাঠের টেবিল ও চেয়ার, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত লোহার তৈরি পণ্য বিক্রির অনুমতি পায়। অন্যদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ফল, সবজি, মসলা, মরিচ, হলুদ, পান, সুপারি, আলু, মধু, বাঁশ ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন।
চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশের ৫০ জন করে মোট ১০০ বিক্রেতা পণ্যবিক্রি করতে পারতেন। দু’দেশের সীমান্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যাদের বসবাস শুধু তারাই বর্ডার হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা হতে পারবেন। ইতোপূর্বে দেড় হাজার করে দু’দেশের তিন হাজার ক্রেতাকে বর্ডার হাটে পণ্য কেনার অনুমতি পত্র দেওয়া হয়।
হাটে ভিজিটর এন্ট্রি ফি হচ্ছে ২০ টাকা। বর্তমান বর্ডার হাটের ক্রয়সীমা ২০০ ডলার বা ১৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেকে ১৬ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। বেচাকেনায় বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা ও ভারতীয় রুপি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়ার বর্ডার হাটের একজন বিক্রেতা দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকার মালমাল বিক্রি করতে পারেন। তবে তা শর্তশিথিল করে বিক্রয়সীমাও বাড়ানো যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস