বরিশাল: লিজা আক্তার হেনা শ্রাবণকে বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায়। অনেকেই তাকে হেনা নামে চেনেন।
তারাও এখন বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়কে স্কুটি কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত করেন। যাদের মধ্যে কেউ হয়তো সন্তানকে স্কুলে আনা-নেয়ার কাজ করছেন। কেউ হয়তো কর্মস্থলে ছুটছেন, কেউবা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন এ যানবাহন।
৯০ এর দশকে বরিশাল নগরের রাস্তায় প্রথম হাতে গোনা কয়েকজন নারীকে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যেত। এর দীর্ঘ সময় পর ২০১০-১১ সালের দিকে হাতে গোনা কয়েকজন নারী, যারা বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি ছিলেন, তাদের মোটরসাইকেল চালনা করতে দেখা যেত। তবে, ২০১৫-১৭ সালের দিকে সে ধারার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। এখন নারী বাইকার চোখে পড়ে সহজেই। ৮০ সিসি থেকে শুরু করে এখন বরিশাল নগরে দেড়শ সিসির মোটরসাইকেলও চালান নারীরা।
স্বপ্ন ড্রাইভিং স্কুলের পরিচালক ও ট্রেনার লিজা আক্তার হেনা শ্রাবণ ২০১১ সালের দিকে মোটরসাইকেল চালানো শেখেন। তিনি বলেন, ‘২০১৭-২০১৮ সালের দিকে বরিশালে মেয়েদের মোটরসাইকেলের প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়তে দেখা যায়। মোটরসাইকেল চালাতে বেশি আগ্রহ কর্মজীবী নারীদের। ’
তিনি বলেন, ‘পুরুষদের জন্য মোটরসাইকেল চালানো যত সহজ, নারীদের ক্ষেত্রে তত সহজ নয়। পারিবারিক ও সামাজিক বাধা রয়েছে। তাই প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে স্বপ্ন ড্রাইভিং স্কুল নামে প্রথম আমরাই শুধু মেয়েদের জন্য একটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের যাত্রা করি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের জন্য নারী প্রশিক্ষক নিয়ে এখন আরো কিছু প্রশিক্ষণ স্কুল গড়ে উঠেছে। নারী প্রশিক্ষক দিয়ে নারীদের মোটরসাইকেল চালানো শেখানোয় স্কুলগুলোর অবস্থানও বেশ ভালো। তাই এখন বরিশালে নারী বাইকারদের সংখ্যা বাড়ছে। ’
বরিশাল নগরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী নাজমা রহমান বলেন, ‘শুরুতে মেয়ে হিসেবে মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়টি সবাই মেনে নিতে পারেনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। যদিও এখনো শহরের রাস্তায় ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় নারী বাইকারদের, তবে যে নারী বাইকারের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা কমছে। ’
রাবেয়া আক্তার আঁখি, সানজানা, সুমনা, রাশনা রহমান দিপু, মুন্নীসহ একাধিক নারী বাইকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারীদের মোটরসাইকেলে চালানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের দৃষ্টিবোধ। সবাই এখনো এটি ভালোভাবে নেন না। সড়কে শুধু ট্রাফিক পুলিশের ওপরই আস্থা রেখে চলতে হচ্ছে তাদের। নগরে নারীদের মোটরসাইকেল চালনায় কিছু কিছু জায়গা ও ক্ষেত্রে ইভটিজিংয়ের শিকার যেমন হতে হয়, তেমনই থ্রি-হইলার ও বেপরোয়া চালকদের কারণে আতঙ্কেও থাকতে হয়।
তাদের দাবি, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে নারী বাইকারদের জন্য বিআরটিএতে আলাদা ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়। আবার ড্রাইভিং স্কুলগুলোর লাইসেন্স ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।
এ সব সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন নারী বাইকাররা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
এমএস/এফএম