ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

থানায় আসামির জন্মদিনের কেক কেটে বিতর্কে পুলিশ

সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
থানায় আসামির জন্মদিনের কেক কেটে বিতর্কে পুলিশ দুই ওসির মাঝে কেক কাটছেন আসামি।

সাভার (ঢাকা): সাভার মডেল থানার ওসি পদমর্যাদা সম্পন্ন দুই কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সাইফুল ইসলাম ও (ওসি অপারেশনস) আল আমিন তালুকদার ছাত্রলীগ নেতা ও চাঁদাবাজি মামলার আসামি রিপন সরদার ওরফে রায়হান ইসলামের জন্মদিনে থানায় কেক কেটেছেন।

সম্প্রতি জন্মদিন পালনের এই ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জন্ম নিয়েছে নানা বিতর্ক।

 

জানা গেছে, রিপন সরদার ওরফে রায়হান ইসলাম সাভারের দিলখুশাবাগ এলাকার মো. গুলজারের ছেলে। নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি নিজেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দাবি করেছেন। তিনি আরিফ হোসেন নামে ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতার করা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হন। রিপন সরদার নিজেকে কখনও পরিচয় দেন ছাত্রলীগ নেতা আবার কখনও কর্মী হিসেবে। তবে বাস্তবে উপজেলার কোনো ছাত্রলীগ কমিটিতেই তার পদ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। নিজের নামে মামলা রয়েছে সে বিষয়টিও স্বীকার করেছেন গোপনে এক কথোপকথনে।

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রায়হান ইসলাম নামে একটি ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা এমন ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। পহেলা ফাল্গুনের দিনে (১৪ ফেব্রুয়ারি) সাভার থানায় স্থানীয়ভাবে জন্মদিন পালন করা নিয়ে এখন তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে সাভার মডেল থানা পুলিশ। যদিও পরবর্তীতে স্ট্যাটাসটি রায়হান ইসলাম আইডি থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া সেই ছবিগুলোতে দেখা গেছে, সাভার মডেল থানার ওসি তদন্ত সাইফুল ইসলামের কক্ষে ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন রিপন সরদার। পরে আরেক ছবিতে ওসি অপারেশন ও তদন্ত রিপনকে মাঝখানে রেখে হাসিমুখে কেক কাটছেন ও খাইয়ে দিচ্ছেন।

রিপন সরদার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এমন কিছুতো হয়নি। ফেসবুকে ভালো করে আমার টাইমলাইনে গিয়ে দেখেন। সেখানে আমার ছবি দেওয়া আছে কি না? কিংবা আমি ছাড়ছি কি না? হয়ত বা কেউ এডিট করতে পারে। আপনি একটু ভালো করে বিষয়টা যাচাই করেন ভাই। ঘটনা সত্য হলো, আমার সঙ্গে একটা মানুষের সম্পর্ক থাকলে তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেই পারি। এখন এটা যদি আপনারা সমালোচনার দিকে নেন তাহলে ওটা ওইভাবেই হবে।
দলীয় কোনো পোস্ট আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না ভাই আমি কোনো লীগ করি না। আমি একজন সাধারণ এই আমার পরিচয়। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। এবার আমি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। কিন্তু আমাদের পৌর যুবলীগের কমিটি যেহেতু হয় নাই। এছাড়া আমার কোনো পরিচয়ও নাই।

গোপন এক কথোপকথনে তিনি এক সাংবাদিককে বলেন, ২০১৯ সালে চাঁদাবাজির মামলায় সাভার বাজার স্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার হন। তিন-চার জন দারোগা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। তিন দিন জেলও খেটেছি। যদিও এটা শত্রুতামূলক বলে দাবি করেন রিপন।

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি অপারেশন্স) আল আমিন তালুকদার বলেন, তদন্ত স্যারের রুমে আসছিলো উনি। স্যারে আমারে ডাকলো, আমি গেলাম। একটা ফুলের শুভেচ্ছা দিলো স্যাররে এই। এটা আসলে আমি বুঝতে পারি নাই। যে কার জন্মদিন বা কি বিষয়আশয়। ওকে আমি চিনিও না। ওর সাথে ওতোটা আমার রিলেশনও নাই।

সাভার মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, একটা মানুষ যদি কেক আইনা কয়, ‘ভাই আমার জন্মদিন কেকটা একটু কাইটা দেন এই আর কি। দুই-তিনজনে সুপারিশ করলো এই জন্য করলাম। আসলে এগুলা যদি জানতাম যে ফেসবুকে দিবে পরিচিত হলেও আমি দিতাম না। আমার নিজের ছবিই কোনোদিন ফেসবুকে দেই নাই। আমার পার্সোনাল বিষয় ওগুলা কেন দিব? প্ল্যান প্রোগ্রাম থাকলে হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারতাম। হুট কইরা আইসা বলতেছে, আমার জন্মদিন কেকটা কাইটা দেন।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ-হিল কাফি বলেন, যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে দুই কর্মকর্তা ঠিক কাজ করে নাই। ছবি তোলার কালচারটা ভয়াবহ। সাহেদের ছবি কার সঙ্গে নাই বলেন? বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ইন্ডিয়াতে চলে গেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্ট, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।