গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ। দ্রুত এ রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন গোপালগঞ্জবাসী।
দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির সাজা হাইকোর্ট বহাল রাখায় কোটালীপাড়ায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয় চত্বরে এসে একটি পথসভায় মিলিত হয়।
সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, পৌর মেয়র মো. কামাল হোসেন শেখ, জেলা পরিষদ সদস্য দেবদুলাল বসু পল্টু, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল, আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদার, রুহুল আমিন খান ও উপজেলা স্বেচ্ছসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবলু হাজরা বক্তব্য দেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি হোসেন কালু বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। আজ সেই মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। এ রায়ে আমরা খুশি। আমরা প্রত্যাশা করব, এ রায় দ্রুত কার্যকর হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা বলেন, কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এদেশে আবার তালেবানি শাসন প্রতিষ্ঠার যড়ষন্ত্র করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতে নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকায় গোপালগঞ্জের ছাত্র সমাজ খুশি। দ্রুততম সময়ে এ মামলার রায় কার্যকর হবে বলে আশা করি।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, এ কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, এটা একটি জঘন্যতম অপরাধ। এ মামলায় ১০ আসামির ফাঁসির রায় বহাল রাখায় আমরা কোটালীপাড়াবাসী আনন্দিত।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র শেখ তোজাম্মেল হোসেন টুটুল নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে বহাল রাখায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা পরিকল্পনা মধ্য দিয়ে এ দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল, তাদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেন বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ে আমরা কোটালীপাড়াবাসী আনন্দিত। রায় ঘোষণার পর পর কোটালীপাড়ায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। আশা করব, এ রায় দ্রুত কার্যকর হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, সেদিন ৭৬ কেজি ওজনের বোমা বিস্ফোরিত হলে প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকে মারা যেতেন। এ রায়ে আমরা খুশি। এ রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০০০ সালে কোটালীপাড়া সফরের অংশ হিসেবে শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সমাবেশের দু’দিন আগে ২০ জুলাই কলেজ প্রাঙ্গণে জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী বোমার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
পরে ওই কলেজের উত্তর পাশে সন্তোষ সাধুর দোকানঘরের সামনে থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের বোমাটি উদ্ধার করে। পরদিন ২১ জুলাই গোপালগঞ্জ সদর থেকে ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়।
এসব ঘটনায় আলাদা দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১০ সালে মামলা দু’টি ঢাকার ২ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট দুই মামলার একটিতে ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
এছাড়া একজন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তিনজনের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার ২ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
এসআই