ঢাকা: সরকারি স্থাপনা নির্মাণে ২০২৫ সালের মধ্যে ইটের পরিবর্তে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তখন এমনিতেই অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ হয়ে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে জাতীয় পরিবেশ কমিটির নির্বাহী কমিটির ১৫তম সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮-এ পূর্বের নীতিমালার ১৫টি বিষয় ছাড়াও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, পাহাড়, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং জীবনিরাপত্তা, প্রতিবেশবান্ধব পর্যটন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা প্রস্তুতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবস্থাপনা, অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন, টেকসই উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিবেশ নীতিতে চিহ্নিত বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাসমূহ তাদের স্ব-স্ব কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা নতুন যে আইন করেছি সে আইন অনুযায়ী ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ সরকারি স্থাপনা ব্লক ইট দ্বারা নির্মাণ হবে। এতে করে অবৈধ ইটাভাটাগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চলমান বলেও জানান মন্ত্রী।
সরকারি স্থাপনায় এখনও ইট ব্যবহার হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা শতভাগ আশাবাদী। ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ সরকারি স্থাপনায় ব্লক ব্যবহার করা হবে। ইটের পরিবর্তে ব্লক দিয়ে বাড়ি তৈরিতে প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব। বাড়ির স্থায়িত্ব বেশি হয়, দেখতেও হয় সুন্দর। এছাড়া ব্লকে তৈরি বাড়ি গ্রীষ্মকালে ঠাণ্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও হয় না ব্লক তৈরিতে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোড়া ইটের বদলে ব্লক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়। ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) বিল-২০১৩’ সংশোধনের জন্য সংসদে একটি বিল উত্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
সংসদে সেই বিল পাস হওয়ার পর একই বছরের ২৪ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) এর ধারা ৫(৩ক) এ দেওয়া ক্ষমতাবলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, ব্লক ইট জমি থেকে মাটি নিয়ে নয়, ড্রেজিংয়ের মাটি নিয়ে তৈরি হচ্ছে। আমরা ধাপে ধাপে এগুলো সরকারি স্থাপনায় ব্যবহার শুরু করেছি। বর্তমানে সরকারি স্থাপনায় ৩০ ভাগ ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের আগেই আমরা শতভাগে চলে যাবো।
তিনি বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে ব্লক তৈরি করছে ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সিএসইবি, সিএসইবি ইন্টার লকিং, স্যান্ড সিমেন্ট হলো ব্লক, থার্মার ব্লক, স্যান্ডউইচ প্যানেল ও ফেরোসিমেন্ট চ্যানেলের মতো আধুনিক ব্লক তৈরি করছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মাটির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমানোর উদ্দেশ্যে সব সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে ভবনের দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর, হেরিং বোন বন্ড রাস্তা এবং গ্রাম সড়ক টাইপ-বি’র ক্ষেত্রে ইটের বিকল্প হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ