সিলেট: সিলেটে মা ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সতিন ও সৎ ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিহত নারীর ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে নগরের শাহপরাণ (র.) থানায় হত্যা ও প্ররোচনার দায়ে ৩০২ ও ১০৯ ধারায় মামলা (নং-১৮(২)২০২১) দায়ের করেন।
মামলায় নিহতের সৎ ছেলে আহবাব হোসেন আবাদ ছাড়াও হত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তার মা সুলতানা বেগম রুমিকে আসামি করা হয়েছে।
এসএমপির শাহপরাণ (র.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ট্রিপল মার্ডারের ঘটনার পরপরই আটক আহবাবকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে তার মা সুলতামা বেগম রুমিকে গ্রেফতারের চেষ্টায় আছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত ১২টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার বিআইডিসি মীরমহল্লার ভাড়া বাসায় সৎ মা রুবিয়া বেগম এবং তার মেয়ে মাহা (৭) ও ছেলে তাহসানকে (৪) কোপান আহবাব হোসেন আবাদ। এতে মা-মেয়ে ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে তাহসানের মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পারিবারিক বিরোধের জেরে সৎ মা রুবিয়ার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন করে দেয় স্বামীর প্রথম স্ত্রীর ছেলে আহবাব। হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলতে শোবার ঘরে তোষকে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছিল সে। ঘটনার পর বাসার কলাবসিবল গেট বন্ধ থাকায় ঘাতক আহবাব পালিয়ে যেতে পারেনি। পরে আগুনের ধোয়া দেখে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আগুন নেভান। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে আহবাবকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, নিহত রুবিয়া সিলেট শহরতলীর বিআইডিসি মীরমহল্লা এলাকার ব্যবসায়ী আবদাল হোসেন বুলবুলের দ্বিতীয় স্ত্রী। আর নিহত শিশু দু’টি এ দম্পতির। প্রথম পক্ষের ছেলে আহবাব তাদের হত্যা করে। আহবাব বিয়ানীবাজারে গ্রামের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতো। গত চার/পাঁচ মাস ধরে সে মীরমহল্লা এলাকায় এসে অবস্থান করছিল এবং বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করতো। সৎ মায়ের সংসারকে মেনে নিতে না পারায় এবং বাবার বঞ্চনার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে সৎ মা ও তার সন্তানদের হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে সে।
তার ক্ষোভের ভয়াবহতার প্রমাণ মেলে সৎ মা রুবিয়া বেগম (৩০), তার মেয়ে মাহা (৭) ও ছেলে তাহসানের (৪) মরদেহ দেখে। মা-মেয়ে ও ছেলের দেহে ধারালো অস্ত্রের শতাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ছুরিকাঘাত করে খুন্তি দিয়ে খোঁচানো তাদের। এরপর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বিছানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের হাটগ্রামের ফরমান আলীর মেয়ে রুবিয়া বেগম। প্রায় ১০ বছর আগে বিআইডিসি মীরমহল্লায় বসবাসকারী বিয়ানীবাজারের অষ্টগ্রামের আবদাল হোসেন বুলবুলকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন বুলবুল। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে শহরতলীর বিআইডিসি মীরমহল্লায় ভাড়া বাসায় রাখেন। প্রথম স্ত্রীর খোঁজ তেমন রাখতেন না তিনি। এরই মধ্যে অর্থাভাবে ছেলে আহবাব পড়ালেখা বাদ দেয়। গত পাঁচ মাস আগে সে শহরতলীতে বাবার ব্যবসা দেখাশোনায় যোগ দেয়। বিভিন্ন সময় সে সৎ মাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার বাবাকে ছেড়ে যেতে বলতো।
নিহত রুবিয়া বেগমের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকির বিষয়টি বাড়িতে ফোনে জানান তার বোন। বিষয়টি ভগ্নিপতিকে জানালে তিনি পাত্তা না দিয়ে ছেলেকে শাসন করবেন বলে জানান। তখন বলেছিলাম কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ফেললে কিছুই করার থাকবে না। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাই সত্য হলো।
তিনি বলেন, চারদিন আগে বোন রুবিয়া বেগমের সঙ্গে শেষ কথা হয়। সেদিন ভাগ্নে-ভাগ্নিকে দেখতে আসার কথা বলেছিলেন। তিনি শুক্র অথবা শনিবার আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে দেখা হলো ঠিকই, তবে বাসায় নয়, মর্গে। ঘাতকের ফাঁসি চাই।
এদিকে, শুক্রবার ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে গিয়ে হত্যার আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) টিম। শনিবার নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানায় পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
এনইউ/এসআই