সিরাজগঞ্জ: পিনপতন নিরবতা আর শোকাবহ স্তব্ধতায় শেষ হয় ‘কারাগারের রোজনামচা’ নাটকটি। জাতীয় পতাকায় জড়িয়ে বালিকা অভিনেত্রীর আবেগঘন শেষ সংলাপে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন দর্শকরা।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে সিরাজগঞ্জ শহরের শহীদ এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী রচনা ‘কারাগারের রোজনামচা’ অবলম্বনে নাটক প্রদর্শন শেষে এমন আবহ সৃষ্টি হয়।
মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি নাট্যদল এ নাটকটি মঞ্চায়ন করেছে। কারাগারের রোজনামচা রচনাটিকে নাট্যরুপ দিয়েছেন শাহীন রহমান এবং নির্দেশনায় ছিলেন জেলা কালচারাল অফিসার মাহমুদুল হাসান লালন।
নাটক চলাকালিন সময়ে পুরো মঞ্চই যেন ফিরে গেছে ৭০ দশকের পূর্ব বাংলায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাজীবনের পূর্ণগল্প তুলে ধরা সম্ভব হয়নি নাটকটিতে। তারপরও বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, মানুষের প্রতি ভালবাসা, কারা অভ্যন্তরেও দরাজ কন্ঠে স্বৈরাচারী শাসক প্রতিনিধিদের অত্যাচারের প্রতিবাদের চিত্রগুলো নিগুঢ়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৫২ পৃষ্ঠার ডাইরি থেকেই কারাগারের রোজনামচা রচনা। আর এ থেকেই নাটক। নাটক শেষে পাত্র-পাত্রীরা গ্রিনরুমে ঢোকার পর ভারাক্রান্ত দর্শক মঞ্চ ত্যাগ করছিলেন। সকলের চোখই তখন ছলছল করছিল।
এ সময় কথা হয় সুলতানা রাজিয়া নামে একজন দর্শকের সঙ্গে। তিনি একবাক্যে বলে উঠলেন অসাধাণর। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী রচনা নিয়ে নাটকটি আমাদের কাঁদিয়েছে।
প্রফেসর আতাউর রহমান বরাত নামে অপর এক দর্শক বলেন, আমি অভিভূত। বঙ্গবন্ধুর কারাগারের জীবন, তার ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ নাটকে।
সঙ্গীত শিল্পী মনিকা ইয়াসমিন বলেন, প্রত্যেকটা দৃশ্য এত জীবন্ত ও প্রাণবন্ত ছিলো যে মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে ওই সময়টা দেখতে পাচ্ছি।
এদিকে নাটকটিতে অভিনয় করতে পেরে গর্বিত এর কলাকুশলীরাও। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করা রাসেল আহম্মেদ বলেন, এটা অসাধারণ একটি অনুভূতি। নীলা রহমান বলেন, শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে দারুণ লাগছে।
কখনো জেলের কয়েদী আবার কখনো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চরিত্রে অভিনয় করা সৌমিত্র চন্দ্র দাস শ্রাবণ বলেন, আমার জীবনের এটি প্রথম মঞ্চ নাটক। প্রথম মঞ্চে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা কোন নাটকে অভিনয় করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।
নাটকটি উপভোগ করতে মঞ্চে ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারি, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, সমাজসেবীরাও।
সিরাজগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ গৌর বললেন, বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের ওপর করা নাটকটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও হাউজফুল মঞ্চ সেটা প্রমাণ করেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান বললেন, বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন নিয়ে করা এ নাটকটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি যেন ৭০ দশকে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।
কারাগারের রোজনামচা নাট্যায়নকারী শাহীন রহমান বললেন, আমি যখন রচনাটি পড়েছি তখন আমার কাছে মনে হয়েছে একজন গল্প বলছে আমি শুনছি। আমি সেই অনুভবটি দর্শককে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
নাটকের নির্দেশক মাহমুদুল হাসান লালন বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি এই নাটকটি মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর কারাগারের দিনলিপি সহজ ভাষায় মানুষ মানুষের ছড়িয়ে দিতেই এই আয়োজন।
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মেদ বললেন, শিল্পকলার যে কোন অনুষ্ঠানেই এখন থেকে এই নাটক প্রদর্শন করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
এমআরএ