ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। ইংরেজদের দুরভিসন্ধিতে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর পূর্ব বাংলার ওপর পাকিস্তানিরা অন্যায়ভাবে অনেক কিছু চাপিয়ে দেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে আলপনার আঁকার কাজ শেষ হয়েছে। চারদিকে বরাবরের মতো শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। র্যাব ও ডিএমপির পক্ষ থেকে বসানো হচ্ছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনে জনসাধারণকে সতর্ক করতে লাগানো হয়েছে ডিজিটাল সাইনবোর্ড। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ডান পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন সংলগ্ন মাঠে র্যাব, ডিএমপি ও ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে।
মূল বেদীর ঠিক বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের দেওয়ালে লাল রং-এ লেখা হয়েছে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শামসুর রহমান, আবুল ফজল, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, জসীম উদ্দীন, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, ধীজেন্দ্রলাল রায়, আবুল মনসুর আহমদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অতুলপ্রাসাদ সেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তসহ বিখ্যাত মনিষীদের ভাষা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি। এ সময় কথা হয় চারুকলা অনুষদের সাবেক সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবার লেখা ও অঙ্কনে বৈচিত্র্য আনা হয় তবে সবকিছুতে ভাষা আন্দোলনের আবহ থাকে।
অপরদিকে, প্রতিবার শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি উদ্বোধন করতেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এবার করোনার কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আসছেন না। তাদের পক্ষ থেকে সামরিক সচিব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অমর একুশে উদযাপনের কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর পরে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১’ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগত সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে। এছাড়া, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ জন প্রতিনিধি ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুই জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে যাতায়াতের জন্য একটি রুট-ম্যাপ প্রণীত হয়েছে। তা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে এ বছর কোন জনসমাগম ও অভ্যর্থনার ব্যবস্থা থাকবে না। তাই শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে কোন জনসমাগম করা যাবে না।
কোভিড-১৯ উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে দিবসটি উদযাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদালয় কর্তৃপক্ষ এ বছর সীমিত পরিসরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, দিবসটি উপলক্ষ্যে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবনগুলো জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে সীমিত পরিসরে একটি প্রভাতফেরি বের করা হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রভাতফেরিতে নেতৃত্ব দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে অংশ নেবেন। প্রভাতফেরি সহকারে তারা আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া, বাদ জোহর/সুবিধাজনক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সব হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীমূল প্রস্তুত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্য ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বিগত বছরগুলোর মত এবারও মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পালনের জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সব কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
এসকেবি/এমআরএ