রাজশাহী: মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পান গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু আপত্তি থাকায় রাজশাহী মহানগরের ১২৬ জন তাদের গেজেট নিয়মিত রাখার সুপারিশ পাননি।
সম্প্রতি বেসামরিক গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত রাজশাহী মহানগর কমিটি এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নির্দেশনায় এই কমিটি মোট ১৬০ জনকে যাচাই-বাছাই করেছে। এই ঘটনার পর পুনরায় ওই তালিকা যাচাই-বাছাই এবং প্রকাশ্যে সাক্ষ্য নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই দাবি জানান।
রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গায় রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামাণ্ডার ডা. আবদুল মান্নান, রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুল আজিজ মাস্টার, এফএ ফাউন্ডেশনের মহানগর সভাপতি আলতাফ হোসেনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ১২৬ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ৮৪ জনের আবেদন সরাসরি নামঞ্জুর হয়েছে। ২৬ জন গেজেট নিয়মিত করার আবেদন না করার কারণে তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়নি।
এছাড়া আটজনের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্তি সিদ্ধান্ত এসেছে বলে কমিটি উল্লেখ করেছে। এর বাইরে আরও আটজনের ব্যাপারে অধিকতর যাচাই করে জামুকাকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে কমিটি।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। এই ঘটনার পর যারা সুপারিশ পাননি তারা ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি দেখার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। সদস্য সচিব ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন—বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এস. মনিরুল ইসলাম। সুপারিশ না পাওয়া ব্যক্তিরা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, কমিটির সভাপতি সফিকুর রহমান ২০১২ সালে মহানগরীর ২৬০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ‘ভুয়া’ হিসেবে উল্লেখ করে জামুকায় চিঠি দিয়েছিলেন। এরপর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনে তার প্যানেল পরাজিত হয়। এই ক্ষোভ থেকে তিনি যাচাই-বাছাইয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে নাম সুপারিশ করেননি। তিনি কমিটির অন্যদেরও প্রভাবিত করেছেন বলেও অভিযোগ করেন সুপারিশ না পাওয়া ভুক্তভোগীরা।
ওই তালিকায় সুপারিশ পাননি অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা তিনজন সহযোদ্ধাকে সাক্ষী হিসেবে কমিটির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু কমিটি প্রথমে আমার কথা শুনেছে, এরপর একজন একজন করে সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছে। ভেতরে কী হয়েছে আমরা কেউ জানি না। অনেককে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের কোথাও নেই যে এভাবে আলাদা আলাদা সাক্ষ্য হবে। যিনি অভিযুক্ত তার সামনেই সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। এটাই আইন। যাচাই-বাছাইকালে এই নিয়ম মানা হয়নি। তাই আমরা প্রকাশ্যে সাক্ষ্য গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি জামুকায় পাঠানো ওই তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করারও দাবি জানাচ্ছি।
বাদ পড়া তালিকায় রয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ রজব আলীর বাবার নামও। সংবাদ সম্মেলনে রজব আলীর অভিযোগ- জেনারেল ওসমানী তার বাবাকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল থেকে রিলিজ লেটার দেওয়া হয়েছে। কমিটির একজন সদস্য তার নিজের সার্টিফিকেটের সাথে এসব মিলিয়ে দেখে তাকে বলেছেন, সব সঠিক আছে। তারপরও তার বাবার গেজেট নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয়নি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এজন্য অন্যদের সাথে তিনিও ওই একই দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
এসএস/এমজেএফ