ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

একটি পোট্রেট সম্বল করে চলছে সালাম স্মৃতি জাদুঘর!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
একটি পোট্রেট সম্বল করে চলছে সালাম স্মৃতি জাদুঘর! শহীদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ভাষাশহীদ আব্দুস সালামের নামে ফেনীতে গড়ে উঠেছে একটি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। তবে, জাদুঘর শুধু নামেই সীমাবদ্ধ।

প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পরও সালামের একটি পোট্রেট ছাড়া নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন। গ্রন্থাগারটিতে যুগোপযোগী বই না থাকায় যান না পাঠক।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানান আশ্বাস নিয়ে হাজির হলেও বাকি সময় খবর রাখেন না কেউ।

জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটির তদারকি প্রতিষ্ঠান ফেনী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ‘জাদুঘর ঠিক বলা যাবে না, কারণ এখানে সালামের কোনো স্মৃতিচিহ্নই সংরক্ষিত নেই, কারণ এ ধরনের কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। এখানে আসলে প্রধানত একটা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। লাইব্রেরিতে যথেষ্ট সংখ্যক বই আছে, আমরা বই সংরক্ষণ করছি, বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করছি। যেহেতু এটা গ্রামীণ এলাকায় গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত তাই পাঠক সংখ্যা তেমন একটা নেই। আমরা মনে করি পর্যাায়ক্রমে সেখানে পাঠক সংখ্যা বাড়বে।

ফেনী জেলা পরিষদের কারিগরি শাখা সূত্র জানায়, জাদুঘরে সংরক্ষণ করার মত শহীদ সালামের কোনো স্মৃতি চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবার থেকেও তাঁর স্মৃতি বিজড়িত কিছু সরবরাহ করতে পারেনি।

গ্রন্থাগার প্রসঙ্গে একই সূত্র জানায়, প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যেও সাড়ে ৩ হাজার বই পাঠকদের জন্য রাখা হয়েছে।

গ্রন্থাগারিক লুৎফুর রহমান বাবলু জানান, সাড়ে তিন হাজার বই রয়েছে গ্রন্থাগারটিতে। ভ্রমণ কাহিনি, গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ থাকলেও ভাষা সম্পর্কিত কোনো বই সংগ্রহে নেই। গ্রন্থাগারের রেজিস্ট্রার খাতা খুলে দেখা যায় পুরো বছরে পাঠক সাকুল্যে ১০ জন।  দেখাশুনা করার লোক না থাকায় অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি।

স্থানীয়দের বক্তব্য, একুশে ফেব্রুয়ারি এলে বিভিন্ন পর্যায় হতে নানান আশ্বাস মেলে কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নে সালামের গ্রামের বাড়ির পাশে ১২ শতক জমির ওপর প্রায় ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৮ সালে সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়। তবে, সেখানে যাওয়ার পথ নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে।

জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রন্থাগারের পাশে স্থানীয় লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম ভাষাশহীদ সালামের নামে নামকরণ করা হলেও সরকারি দলিল-দস্তাবেজে এখনো লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান জানান, কাগজপত্রেও পরিবর্তন হয়েছে। যেসব কাগজে আগের নাম রয়েছে তা পরিবর্তন করা হবে।

রাস্তা মেরামত প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় মেরামত করা হয়েছে। বাকি কাজটুকু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর করার কথা।

ফেনী সরকারি কলেজের সাবেক বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান  আবু হেনা আবদুল আউয়াল বলেন, ভাষা আন্দোলনে জেলা ও ফেনী সরকারি কলেজের অসামান্য অবদান রয়েছে। ভাষাশহীদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারে সেসব বিষয় উঠে আসতে পারতও। এ জাদুঘরটিতে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন নিয়ে তেমন কোনো সংগ্রহ নেই। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানার মত ভালো কোনো বইও পাওয়া যায়নি।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নের উত্তাল সময়ে চলমান আন্দোলন টগবগে তরুণ সালামের হৃদয়ও ছুঁয়ে যায়। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করলেও তা অগ্রাহ্য করে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিলে নামে ছাত্র-জনতা। সে মিছিলে অদম্য সাহসে অংশ নেন সালামও।
আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে পড়লে মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ গুলিবিদ্ধ হন অনেকে।

গুরুতর আহতাবস্থায় আবদুস সালামকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৭ এপ্রিল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফেনীর গর্বিত এই সন্তান।

দীর্ঘদিন শহীদ সালামের সমাধি অজানা থাকলেও বছর কয়েক আগে ঢাকা আজিমপুর গোরস্থানে চিহ্নিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
এসএইচডি/এএটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।