ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম গাজী (৫০) হঠাৎ করে গত বছরের নভেম্বরের ১ তারিখ নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি পর নুরুল ইসলামকে না পেয়ে ওই মাসের ৪ তারিখে তার স্ত্রী রহিমা বেগম (৪০) রূপনগর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডির পরপরই নুরুলকে খুঁজতে পেতে অভিযান শুরু করে রূপনগর থানা পুলিশ। জিডির প্রায় আড়াই মাস পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি ৪ জনকে আসামি করে জিডিটি অপহরণ মামলায় রূপান্তর করে পুলিশ। এই মামলায় আসামি হলেন চারজন। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অপহরণ মামলা এবং তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও তখনো নুরুলের সন্ধান পায়নি পুলিশ। তবে, ঘটনার মোড় ঘুরে জিডির হওয়ার প্রায় তিন মাস পর শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রূপনগর বেড়িবাঁধের পাশে সাদ ফিলিংস্টেশনের পেছন থেকে এক ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করে।
রূপনগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কঙ্কালটি উদ্ধারের পর পরেই পুলিশের সন্দেহ হয় এটি নিখোঁজ নুরুল ইসলাম গাজীর হতে পারে। আর এই সন্দেহ থেকেই রহিমা বেগমকে কঙ্কালটি দেখালে কঙ্কালের জড়ানো শার্টটি দেখে তিনি স্বামীর মরদেহ বলে শনাক্ত করেন।
নুরুল ইসলাম গাজী ও রহিমা বেগম মিরপুরের রূপনগর থানার বাসিন্দা। তাদের একটি ছোট মুদির দোকান আছে। এই মুদির দোকান দিয়ে তারা জীবিকানির্বাহ করতেন।
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, নুরুল ইসলাম গাজী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেছি। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় তার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। তার স্ত্রী রহিমা স্বামীর পরিচয় শনাক্ত করেছেন। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কঙ্কালটি কিভাবে উদ্ধার হলো এবং নুরুল ইসলাম গাজীকে কি হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে, মিরপুর বিভাগের পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, খবর পেয়ে রূপনগর বেড়িবাঁধের পাশে সাদ ফিলিং স্টেশনের পাশে একটি কঙ্কাল পাওয়া গেছে। পরে রূপনগর থানা পুলিশের গিয়ে কঙ্কালটি উদ্ধার করে। নুরুল ইসলাম গাজীকে হত্যা করা হয়েছে কিনা এটি বের করার আগে নিশ্চিত হতে হবে কঙ্কালটি তার কিনা।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যদিও রহিমা বেগম কঙ্কাল থাকা কালচে রঙের শার্টটি দেখে নিশ্চিত করেছেন এইটি তার স্বামীর কঙ্কাল। তবে, শুধুমাত্র এই এক উপায়ে কোনোভাবেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না এটি নুরুল ইসলামের কঙ্কাল কিনা। শনিবার ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইম সিনের টিম এসে নমুনা নিয়ে গেছে, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া যাবে কঙ্কাল কার। হত্যা করা হয়েছে কিনা তা জানা যাবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে।
এদিকে রূপনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম গাজী ও অপহরণ মামলার চার আসামি স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। পরে নুরুল ইসলাম গাজী মাদক ব্যবসা ছেড়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে রূপনগর এলাকায় একটি মুদির দোকান চালিয়ে জীবনযাপন করতেন। আর এতেই ওই চার আসামির সঙ্গে বিরোধ হয়ে নুরুল ইসলাম গাজীর। আর এই বিরোধের জের ধরে তাকে ওই চারজন হত্যা করে থাকতে পারে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে।
কঙ্কালটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
এডেজএস/এএটি