ঢাকা: আমাদের ভাষা আন্দোলন এখনও চলমান বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে 'বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা অর্জনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অবদান এবং আমাদের করণীয়' শীর্ষক এক অনলাইন ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই আলোচনা আমাদের কেবল পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোতে বাঙালিদের মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠাকে স্মরণ করিয়ে দেয়না, বিশ্বের নানা স্থানে অনুষ্ঠিত ও চলমান মাতৃভাষার দাবিকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। এমনকি আসামের শিলচরে বাংলা ভাষার জন্য রক্তদানও সারা বিশ্বের মাতৃভাষার দাবিকে মহিমান্বিত করে। মাতৃভাষার আন্দোলন এখনও পাকিস্তান, ভারত, লাটভিয়া, আমেরিকা, নেপাল ও দক্ষিণ আমেরিকায় চলমান। আমরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য রক্ত দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পিতৃত্বে একটি বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। এই অর্জনের পাশাপাশি আমাদের শহীদ দিবস সারা বিশ্বের মাতৃভাষা দিবস হওয়াটাও আমাদের বিশাল অর্জন। এজন্য ধন্যবাদ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে।
আমাদের ভাষা আন্দোলন এখনও চলমান উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা এই প্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবহার করার জন্য ইউনিকোড ও আইকানের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এর সব সমস্যার সমাধান করেছি। আমাদের রয়েছে ডট বাংলা ডমেইন। এরই মধ্যে আমরা যে কোন ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি বলে একদিকে আমাদের মুদ্রণ ও প্রকাশনায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রতিদিনই বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে এখনও আমরা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে পারিনি। পারিনি উচ্চ শিক্ষা বা উচ্চ আদালতের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। অন্যদিকে রোমান হরফে বাংলা লেখা বা রোমান হরফকে বাংলায় রূপান্তর করার এক জঘণ্য প্রবণতা আমাদের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন-যেমন বানান পরীক্ষক, ওসিআর, স্পিচ টু টেক্সট-টেক্সট টু স্পিচ ইত্যাদি তৈরি হয়নি। আশার কথা যে সরকার ১৭ সাল থেকে ভাষার জন্য ১৬টি টুলস ব্যবহার করার জন্য ১৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমরা এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ সফলতা কামনা করি।
সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বরেণ্য কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী এবং সংসদ সদস্য অ্যারমা দত্ত, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্কের সাধারণ সম্পাদক, লেখক চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ।
বাংলাদেশে সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
আরকেআর/এমআরএ