ফেনী: ফেনীতে ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে বাণিজ্যমেলা। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে সারা বছর ব্যবসায় মন্দা যাওয়ার পর বাণিজ্যে কিছুটা প্রাণ ফিরতে শুরু করলে তাতে বাগড়া বসাচ্ছে এই বাণিজ্যমেলা।
করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে ফেনীতে অমর একুশে বইমেলা না হলেও শহরের ওয়াপদা মাঠে প্রতি বছরের মত বাণিজ্যমেলার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। মেলার পরিচালক ইসলাম খান পিন্টু জানান, উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত না হলেও সহসা তারিখ নির্ধারণ হবে। চলবে ত্রিশ দিন।
অতীতে মেলা এক মাসের অনুমতি নিয়ে শুরু হলেও চলতো আরও বেশি দিন। তবে মেলার আয়োজকরা বলছেন, মেলায় অংশগ্রহণকারীরা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা ভাসমান ব্যবসা করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
আসাদ উল্যাহ নামে একজন বেসরকারি কলেজ শিক্ষক বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণরোধে সরকারের সিদ্ধান্তে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মেলাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় করে নারী ও শিশু-কিশোর।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মৌসুমী মেলাগুলোকে ভালোভাবে নিতে পারেননি। তাদের দাবি, মেলা চলাকালীন আার্থিকভাবে বড় রকম ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। তাই মেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কেন ক্ষতি, এমন প্রশ্নের জবাবে বড় বাজারের মদিনা স্টোরের মালিক নুরুল আফসার বলেন, এমনিতেই করোনার কারণে বড় রকমের ঋণ হয়েছে। নতুন উৎপাত যোগ হয়েছে বাণিজ্যমেলা। মেলাগুলোতে অন্যতম আকর্ষণ থাকে কসমেটিকস। ক্রেতা সেখানেই ভিড় করে। সেখানে সবাই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী এবং নকল ও নিম্নমানের প্রসাধনী কম দামে বিক্রয় করে। তাছাড়া মেলা শেষে ক্রেতা যখন একই মোড়কের পণ্য কিনতে এসে উচ্চমূল্য দেখেন, তখন কৈফিয়তের কারণে হয়রানি হতে হয়।
মেলায় আকর্ষণের অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস সামগ্রী, ব্যাগ ও নিত্য ব্যবহার্য কাঁচের পণ্য।
জেবি সড়কে এলাহী কর্ণারের মালিক মনসুর উদ্দিন খান অভিযোগ করেন, মেলায় সবচেয়ে নিম্নমানের ব্যাগ সরবরাহ হয়ে থাকে। কারণ এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কোনো ঠিকানা নেই, তাই জবাবদিহিতা নেই। কম দাম পেলেই ক্রেতা কিনতে শুরু করেন। যারা এ শহরে নিয়ম-নীতি মেনে ব্যবসা করছেন করোনার কারণে তাদের ক্ষতি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
ফেনী এ্যালুমিনিয়ামের সত্ত্বাধিকারী সোহেল বলেন, মেলার দোকান বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুযোগ পান না। মেলার ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই অন্য জেলার। তারা ফেনী থেকে টাকা কামিয়ে চলে যায়, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়তে হয় আমাদের। আমরা বহুবার মেলা আয়োজন নিয়ে আপত্তি জানালেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ফেনীর ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এ সমস্ত মেলা বন্ধের দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি ও ক্ষোভ প্রসঙ্গে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, করোনায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব তলানিতে। মেলাগুলোতে ওয়ান টাইম প্রকৃতির পণ্যের পসরা বসে। ক্রেতা এসব নকল ও নিম্নমানের পণ্যে আকৃষ্ট থাকে। ফলে শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ে ক্রেতাশূন্য।
তিনি অভিযোগ করেন, এ মেলায় স্থানীয় বা বাইরের কোনো উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন না। তাদের পণ্যও এখানে প্রদর্শন করা হয় না।
মেলার জন্য এখনও লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান। তিনি বলেন, পুলিশ প্রতিবেদন হাতে এসেছে। এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, মেলা শুধু পণ্যের বেচাবিক্রি তা না, এটি একটি বিনোদনের মাধ্যম। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হস্তশিল্পসহ অনেক পণ্যের সমারোহ হবে। দেশের অনেকগুলো জেলাতেই এ মেলা চলছে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতির বিষয়ে মেলার পরিচালক বলেন, এখানে যারা স্টল নেয় তারা ভাসমান এবং নিম্ন আয়ের মানুষ।
এক মাসের কথা বলা হলেও অনুমতির বাইরে আরও বেশিদিন মেলা চালু রাখা বিষয়ে তিনি বলেন, মেলা জমতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় পার হয়ে যায়। মেলায় যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়, অবশিষ্ট দিনে পুঁজি উঠে আসে না।
এ বছর করোনার কারণে মেলায় অংশগ্রহণকারী অনেক ব্যবসায়ীর কাছে পুঁজি নেই। আমরা তাদের পুঁজি দিচ্ছি। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেলা শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মেলায় ৮০টি স্টল রয়েছে। অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা মেলা থেকে ব্যবসা করে ভাড়া পরিশোধ করেন।
অন্যদিকে মেলা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একুশে বই মেলা হচ্ছে না, কিন্তু ব্যবসার জন্য বাণিজ্যমেলা উন্মুক্ত হচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, মানহীন রঙ চটা পণ্যে সয়লাব এই মেলার কারণে একদিকে যেমন ঠকছে ক্রেতারা, অন্যদিকে মাসের পর মাস চলা এ মেলায় চরম আর্থিক ক্ষতি গুণতে হয় ফেনীর শত শত ব্যবসায়ীদের। করোনার এই প্রতিকূলতার মুহূর্তে ফেনীর ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে অন্তত এ বছর মেলা যেন বন্ধ রাখা হয়, দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
এসএইচডি/আরএ