ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ

ঢাকা: রিয়েল এস্টেট ব্যবসার অন্তরালে গ্রাহকদের ৩০ মাসে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এসএস আবাসন নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারণা চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে প্লট/ফ্ল্যাটের বুকিং ফরম ৫০টি, এসএস আবাসনের লেনদেন সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার ৭টি, এসএস আবাসনের অর্থ বিনিয়োগ চুক্তিপত্র ১০০ টাকা সমমানের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ১২টি, আবেদন ফরম ৩৫টি, লেনদেন সংক্রান্ত খাতা ১৭টি, ডেবিট ভাউচার ২টি, মানি রিসিট ৬টি, এসএস আবাসনের কমিশন শিট ৬ পাতা ও নগদ ১৪ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন—আল আমিন (৩৮), মো. মামুন (৩৯), মো. মোজাম্মেল হোসেন (৫০), সাইফুল ইসলাম (৫১), আব্দুল হালিম (৪৮), জাহাঙ্গীর আলম (৪২), শাহাদাত হোসেন সুমন (৩৮) ও আমিনুল ইসলাম (২৪)।

তবে এই চক্রের মূলহোতা ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রাশেদুর রহমান লেখা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতাররা পরস্পরের যোগসাজশে গত দেড় বছর ধরে আবাসিক এলাকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে গ্রাহকদের অধিক মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক ভুক্তভোগীর তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন।

একেকজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৩ লাখ পর্যন্ত টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে এসএস আবাসন নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি। তদন্তে এই প্রতারিতের সংখ্যা ও আত্মসাৎকৃত টাকার সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকদের টাকা নিয়ে তারা ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন অফিস খুলে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন।

সিআইডি জানায়, ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহীরা এলে ৩০ মাসে টাকা দ্বিগুণের লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়। আবার কেউ বিনিয়োগকারীকে আনতে পারলে ৬ শতাংশ কমিশনের প্রলোভন দেখানো হয়। এই ফাঁদে পা দেওয়াদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যের সংখ্যাই বেশি। এমন প্রলোভনে তারা টাকা বিনিয়োগ করেন। অনেকে লাভ বাবদ টাকাও পেয়েছেন। তবে কিছুদিন পর তা বন্ধ হয়ে যায় এবং অফিস পরিবর্তন করে যোগাযোগও বন্ধ করে দেয় প্রতারকরা।

সিআইডি কর্মকর্তা শেখ ওমর ফারুক বলেন, প্রতারক চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে এই প্রতারণামূলক লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। অনেকেই লোভে পড়েই বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগের আগে পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। প্রতারণার শিকার হওয়ার পর সিআইডিতে শতাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটির মূলহোতা রাশেদুর রহমান নজরদারিতেই রয়েছেন। তার পালানোর সুযোগ নেই। এই ঘটনার সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কিংবা কোনো সরকারি দফতরের কর্মকর্তা জড়িত থাকার তথ্য আমরা পাইনি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিআইডি কার্যালয়ে প্রতারণার শিকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. আইয়ুব হোসাইন জানান, লাখে ৬ হাজার ৩০০ টাকা দেবার প্রস্তাবে এসএস আবাসন প্রতিষ্ঠানে ৪ লাখ টাকা লগ্নি করেন তিনি। টাকা দেওয়ার পর মঙ্গলবার লাভের ২৫ হাজার ২০০ টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ভেবেছিলাম প্রতিষ্ঠানটিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরাও আছেন, প্রতারণার সুযোগ নেই। লাখে ৬ হাজার ৩০০ টাকা পাবার আশায় ৪ লাখ টাকা লগ্নি করেছি। এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও নাই!

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।