পাবনা: দীর্ঘ দুই দশক পরে আবারো চালু হতে যাচ্ছে পাবনার কাজিরহাট-আরিচা নৌ-পথের ফেরি চলাচল। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই স্থানীয় পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ ফিরোজ কবিরের নাম না থাকায় তার সমর্থকেরা নামফলকটি খুলে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নামফলকটি খুলে নেওয়ার সময় সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে ধাওয়া দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ফেরি চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী। এজন্য বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ঘাট এলাকার কাজ পরিদর্শন যান। তখনই এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, একমাস ধরে চলছে নদী ড্রেজিংয়ের কাজ। বিভিন্ন সময় ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। উত্তর-দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বঙ্গবন্ধু সেতু। এই সেতুর উপরে চাপ কমিয়ে আনার লক্ষে বর্তমান সরকার দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ তার আশেপাশের অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষে নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ করছে পদ্মাসেতু। আর পাবনা রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন পরিবহন খুব স্বল্প সময়ে রাজধানীসহ তার আশেপাশে জেলাতে যাতায়াতের জন্য ও বঙ্গবন্ধু সেতুর উপরে চাপ কমিয়ে আনার লক্ষে নৌ-পথকে গুরুত্ব দিয়ে চালু হতে যাচ্ছে এই ফেরি চলাচল। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক কারণে ঘাট এলাকায় চলছে চরম উত্তেজনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাংলানিউজকে বলেন, এমপির সামনেই তার নেতাকর্মীরা নামফলক ভেঙে ফেলে। এরপর এমপির সমর্থকেরা সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। তবে তখন এমপি কোনো কথা বলেননি। এছাড়া ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিলো তারাও নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
এ বিষয়ে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার আগে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। স্থানীয়দের মাধ্যমে আমিও শুনেছি নামফলকে এমপি স্যারের নাম না থাকার বিষয়ে। তবে এ বিষয়ে ওই স্থানে কোনো ঝামেলা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
বিআইডব্লিউটিএ-এর প্রধান প্রকৌশলী মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নামফলক নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে এমপি মহাদয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমার কাছে নামফলকের বিষয় জানতে চাইলে অমি তাকে বিস্তারিত বলেছি। যেহেতু সরকারের উন্নয়ন কাজ সেখানে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এমপি সাহেব যখন যান তখন নামফলকের কাজ চলমান ছিলো। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেইভাবেই কাজ চলছে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি আগামীকালের জন্য।
এ ঘটনার বিষয়ে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহম্মেদ ফিরোজ কবির বলেন, বৃহস্পতিবার আমি ঘাট এলাকার কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। মাঠ পরিদর্শন করে ঘাট এলাকার উদ্বোধনীর স্থানে গেলে আমার কর্মী সমর্থকেরা আমাকে বিষয়টি জানান। উদ্বোধনীর নামফলকে আমার নাম নেই। আমি গিয়ে দেখি শুধু মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নাম দিয়ে ফলক স্থানে কাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম থাকার কথা কিন্তু সেটি হয়নি। কাজে দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে আমি প্রধান প্রকৌশলীর মহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে ‘সরি’ বলেছেন নাম না থাকার কারণে। দ্রুত কাজ করার জন্য আর চারজন সংসদ সদস্য থাকার জন্য শুধু মন্ত্রী মহাদয়ের নাম দেওয়া হয়েছে বলে তিনি আমাকে বলেছেন। তবে সেখানে কোনো ঝামেলা হয়নি। যারা বলেছে নামফলক ভাঙচুর হয়েছে তারা আমার নামে মিথ্যা কথা বলেছে। আমার কর্মী সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়েছে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে। কিন্তু আমি উপরে কথা বলে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
এনটি