ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিসিএস পরীক্ষা দিতে গিয়ে তছনছ চিকিৎসক পরিবারের স্বপ্ন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
বিসিএস পরীক্ষা দিতে গিয়ে তছনছ চিকিৎসক পরিবারের স্বপ্ন

সিলেট: বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে স্বামীর হাত ধরে রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছিলেন ডা. শারমিন আক্তার অন্তরা। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আরেক ধাপ এগুতে তাদের এ যাত্রা।

অবুঝ দুই কন্যা সন্তানকে রেখে যান বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু কে জানতো-দুই কন্যা সন্তানকে আর কোলে নেবেন না তাদের বাবা। স্বপ্নের পথে পা মাড়াতে গিয়ে স্বামীকে হারাতে হবে অন্তরাকে। হাসপাতালের বেডে শুয়েও স্বামীর ফেরার অপেক্ষায় তিনি। কিন্তু চিকিৎসক স্বামী তার কাছে আর কোনো দিন আসবে না, এ কথা এখনও জানেন না অন্তরা।   

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে মারা যান ডা. ইমরান খান রুমেল (৪৮)। একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা এই চিকিৎসক দম্পতির জীবন-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলো। দুর্ঘটনার পর আহত ডা. শারমিন আক্তার অন্তরাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার বিকেলে তার দেহে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।  

সরেজমিন ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ইমরান ও অন্তরার স্বজনরা বিলাপ করছেন। ছেলে হারানোর শোকে পাথর সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের সামনে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন নিহতের বাবা ডা. আমজাদ হোসেন খান। তার সাবেক কর্মস্থল ছিল ওই হাসপাতাল।  

অন্তরার বাবা মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বিলাপ করে বলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষা আমার মেয়ের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো। বিসিএস পরীক্ষা দিতে শুক্রবার সকালে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কে জানে তাদের এমন সর্বনাশ হবে।  

নিহত ইমরান সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী অন্তরা গুরুতর আহত হন। ওই চিকিৎসক দম্পতি চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের বাসিন্দা। তারা নগরীর সুবিদবাজারের ফাজিলচিশ আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
 
নিহতের স্বজনরা জানান, ৪২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে দুই শিশু কন্যাকে সিলেটে রেখে শুক্রবার সকাল ছয়টার বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন চিকিৎসক দম্পতি।

নিহত ডা. ইমরানের প্রতিবেশীরা জানান, সিলেট থেকে রওনা হওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে ইমরানের বোন এসে বলেন, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। দুর্ঘটনায় তার ভাই মিসিং। তার ভাবী গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এরপর তারা হাসপাতালে রওয়ানা হন। প্রতিবেশী হলেও তারা আপনজনের মতো থাকতেন। ডা. ইমরানের মৃত্য সংবাদ তাদেরও কাঁদাচ্ছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশীদপুরে তাদের বহন করা এনা পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে সিলেটমুখী লন্ডন এক্সপ্রেস বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ইমরান। আহত হন শারমিন আক্তার। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চিকিৎসক দম্পতির পরিবারের সদস্যরা।

পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত চিকিৎসক ইমরান সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক আমজাদ হোসেন খানের ছেলে। প্রায় সাত বছর আগে শারমিন আক্তার অন্তরার সঙ্গে ইমরানের বিয়ে হয়। তাদের সাড়ে চার বছর বয়সের ইনায়া খান ও তিন বছরের ইন্তিয়া খান নামের দুটি সন্তান আছে।

রুমেলের দাফন সম্পন্ন
শুক্রবার বাদ আসর হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে নামাজের জানাজা শেষে মানিক পীর (রহ.) কবরস্থানে ইমরানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় চিকিৎসক মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
এনইউ/এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।