ঢাকা: জনবহুল রাজধানীতে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পাওয়া যায়। তবে বহুতল ভবনগুলোতে আগুন লাগলে বিভিন্ন কারণেই প্রাণহানি রোধ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
বহুতল ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফফেন্স অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় এবার গাউসিয়া মার্কেটে কৃত্রিম অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে মহড়া সম্পন্ন করেছে বাহিনীটি।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নিউমার্কেট থানাধীন গাউসিয়া মার্কেট ও পার্শ্ববর্তী ইসমাইল ম্যানশনে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে 'ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি মহড়ার' অংশ হিসেবে নিউমার্কেট-গাউসিয়া জোনে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়।
মহড়ার শুরুতে গাউসিয়া মার্কেট ও পার্শ্ববর্তী ভবনে কৃত্রিম অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি করা হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে ভবনে আটকে পড়াদের উদ্ধার এবং তাদের হাসপাতালে পাঠাতে পৃথম পৃথক টিম কাজ করে। এছাড়া ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় ওই কৃত্রিম অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় উপস্থিত সকলের মধ্যে সচেতনতামূলক বার্তা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেনটেইনেন্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগুন লাগবে এরপর আমরা এসে নেভাবো এটা অগ্নি নিরাপত্তা নয়। অগ্নি নিরাপত্তা হচ্ছে ভবনের অগ্নিকাণ্ড প্ররিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা। এখানে যে কয়েকটি ভবন আমার চোখের সামনে রয়েছে, সেগুলো আমরা পরীক্ষা না করেই বলতে পারি এগুলো অগ্নি নিরাপত্তা অত্যন্ত দূর্বল।
আমরা দেখছি ভবনের সামনে অসংখ্য ঝুলন্ত তার। কখনে এসব ভবনে অগ্নিকাণ্ড হলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের প্রথমে যে বাধা সৃষ্টি করবে, তা হচ্ছে অপরিকল্পিত এসব ইলেক্ট্রিক লাইন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে স্পষ্টভাবে ভবনের অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। আপনারা অবশ্যই এটি নিশ্চিত করবেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যতোই শপিং কমপ্লেক্স হোক, এখনো ঈদ বা পুজায় শপিংয়ের প্রথম পছন্দ এই নিউমার্কেট এবং গাউসিয়া। হয়তো আগামী ১০ বছরেও এটি প্রথম পছন্দই থাকবে। তাই আমরা আশা করবো যেন কোন অগ্নি দূর্ঘটনায় যেন একটি মানুষের জীবনও না যায়।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়েরর অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিত কুমার সেন গাউসিয়া মার্কেটের একটি ভবনকে লক্ষ্য করে বলেন, আমি ভয়ে থাকি এই নূর ম্যানশন নিয়ে। এর পাশে গাউসিয়া মার্কেটের যে ভবন হয়েছে সেটার হয়তো কিছুটা ভালো ব্যবস্থাপনা রয়েছে কিন্তু এই নূর ম্যানশন নিয়ে আমার ভয় আছে।
আগুন লগছে, আর ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভাচ্ছে আমরা এটা চাইনা। আমরা চাই এমন পরিবেশ থাকবে যেন আগুন না লাগে। আর যদি কখনো আগুন লাগে তাহলে নিজেরাই যেন সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা চাই প্রতি দোকানে দোকানে নিরাপত্তা সামগ্রী থাকবে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানির উৎস খুঁজে পান না। তবে এমন মহড়ার মাধ্যমে তাদের রিহার্সেল হয়েছে। এর ফলে পানির উৎস, বের হওয়া বা প্রবেশের পথসহ পুরো চিত্র তারা রেকর্ড করে ফেলেছে। যা পরবর্তীতে এমন কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুততম ব্যবস্থা নিতে কাজে আসবে।
এ সময় ফায়ার সার্ভিসের ঊর্দ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, মার্কেট মালিক সমিতির নেতারা ও স্থানীয় কাউন্সিলর উপস্থিতি ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
পিএম/কেএআর