ঢাকা: বাংলাদেশে নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল পথচলা উদযাপনে 'যাত্রা (জার্নি), লাল সবুজের দেশে ইউনিলিভার এর গল্প' শীর্ষক বই প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল)।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকায় রেডিসন ব্লু হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ প্রকাশনা (বিক্রির জন্য নয়) হিসেবে প্রকাশিত এই বইটিতে বাংলাদেশে ব্যবসারত অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীনতম বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের পথচলা ও সাফল্যের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এইচ ই রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর এমপি সহ স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ৪০ জন শীর্ষস্থানীয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার এইচ ই রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, ‘আমি ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর 'যাত্রা' নামক অনুপ্রেরণামূলক বইটির মোড়ক উন্মোচন করতে পেরে ভীষণ আনন্দিত। বইটিতে বাংলাদেশে ইউনিলিভারের দীর্ঘ পথচলার সময়ের কিছু গৌরবগাঁথা এবং ইতিবাচক নানান প্রভাবের গল্প, ঘটনা ও চিত্র অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এদেশে ইউনিলিভারের সফলতার ইতিহাস বাংলাদেশের নিজের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অর্জনেরই বাস্তব প্রতিফলন। কাজেই কোম্পানিটি যে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে, সেটা বেশ জোর দিয়েই বলা যায়। সত্য বলতে কি, যুক্তরাজ্যের এই কোম্পানিটির জন্য আমি রীতিমত গর্ববোধ করি, কারণ ব্যবসার নীতি-নৈতিকতা মেনে চলা ও কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) জায়গা থেকে কোম্পানিটির বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া কোম্পানি হিসেবে কেবল মুনাফা অর্জনের জন্যই ইউনিলিভার ব্যবসায় পরিচালনা করে না, বরং বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপকার সাধনে কাজ করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সারাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইউনিলিভার যেভাবে ঢাকার বাইরে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের সুফল ছড়িয়ে দিয়েছে, সেটাও সত্যি দারুণ এক ব্যাপার। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০তম বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সুযোগে আমি যুক্তরাজ্যের পোর্ট সানলাইট থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সফলতার সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ইউনিলিভারকে অভিনন্দন জানাই। ’
অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বইটিতে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এর ধারাবাহিক ইতিহাস তুলে ধরেছে, যেটি কেবল ব্যবসায়িক দিক থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সমৃদ্ধি ও ক্রমবিকাশের কাহিনী বর্ণনা করেনি বরং বিজ্ঞাপন ও মিডিয়ার মত কিছু শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোম্পানিটির অবদানকে প্রতিফলিত করেছে। বইটির কিছু গল্পের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অনেক মিল রয়েছে, যা আমাকে নস্টালজিক করে তুলছে। মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে গৃহিত কোম্পানিটির নতুন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে জানতে পেরেও আমি ভীষণ আনন্দিত। আগামী দিনগুলোতেও ইউনিলিভারের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনে ধারা বজায় থাকুক, আমি এই কামনা করি। ’
গৌরবোজ্জ্বল বিশেষ এই মুহূর্তে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে বলেন, ’ইউনিলিভারে আমাদের সবার জন্য এটি একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। মহান এই জাতি যখন স্বাধীনতার ৫০তম বছর উদযাপন করছে, ঠিক সেই সময়ে ঐসব বীর সন্তানদের গৌরবগাঁথা নিয়ে ‘যাত্রা’ নামক বইটি প্রকাশ করা হচ্ছে, যারা এদেশ এবং কোম্পানির সমৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি লাখো মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব রেখে চলেছে। ‘যাত্রা’ বইটিতে কর্মীদের স্মৃতিচারণায় ইউবিএল এর পথচলার ইতিহাস থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য অর্জন সহ সার্বিক কার্যক্রমের চিত্র ওঠে এসেছে, যা অন্যদেরকে দারুণভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতেও সাহায্য করবে। আগামীদিনেও এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে দক্ষ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে সবচেয়ে দায়িত্বশীল আচরণ পালন করার মাধ্যমে লাল-সবুজের অনন্য এই দেশে টেকসই ব্যবসা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা এখন নতুন মাল্টি-স্টেকহোল্ডার মডেল অনুসরণ করছি। ’ সাড়ে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় আগে এই ভূখন্ডে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করার সময় বহুজাতিক কোম্পানির নাম ছিলো ‘লিভার ব্রাদার্স’ সময়ের বিবর্তনে যা এখন সবার কাছে ‘ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড’ (ইউবিএল) নামে পরিচিত।
২০১৮ সালে বই প্রকাশের এই উদ্যোগটির কাজ শুরু হয়। কোম্পানিটির বর্তমান ও সাবেক কর্মী, অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের স্মৃতিচারণার ভিত্তিতেই মূলত: বইটি রচিত হয়েছে, যেখানে কোম্পানির শুরুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতার গল্প ওঠে এসেছে। স্মৃতিচারণামূলক গল্পকথার মাধ্যমে বইটিতে বাংলাদেশে ইউনিলিভার এর যাত্রাপথে অর্জিত সফলতা ও মাইলফলক গুলোর গল্প উঠে এসেছে, যেখানে সাবান তৈরির ছোট একটি কারখানা দিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের সবচেয়ে বড় কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস হয়ে ওঠা, ওয়াশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনসাধনে কাজ করা, দাঁতের যতœ ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করা, নতুন নতুন উদ্ভাবন চিন্তা কাজে লাগিয়ে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সাবান-শ্যাম্পুর মিনি-প্যাক পৌঁছে দেওয়া এবং জনপ্রিয় করে তোলা, ১৯৯২ সালে ফাইসন্স কোম্পানিকে অধিগ্রহণ এবং ২০২০ সালে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) অধিগ্রহণের মাধ্যমে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডে রূপান্তরের মতো রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। জিএসকে অধিগ্রহণের ঘটনাটি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লেনদেনের ঘটনা। এভাবে বাংলাদেশে ইউনিলিভারের সবক'টি সাফল্য ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া কিভাবে ক্রমাগত ব্যবসায়িক সাফল্যের সুবাদে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভারের ধারাবাহিক উৎকর্ষ ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের মুকুটে একটি মহামূল্যবান রতœ হয়ে জ্বলজ্বল করছে, সেই গল্পও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ বইটিতে।
ইউনিলিভার তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম বড় অংশীদার হিসেবে কাজ করে আসছে এবং বেশ কয়েকবার শীর্ষ করতাদা প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার অর্জন করেছে।
এছাড়া নিজস্ব জনপ্রিয় ব্র্যান্ড গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশী ভোক্তাদের জীবনযাপনের ধরন পাল্টে দিয়েছে ইউনিলিভার। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারির অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিস্থিতিতেও নতুন স্টার্টআপ বা নবীন উদ্যোক্তাদের নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেও ব্যাপক সহায়তা করেছে কোম্পানিটি। ট্যালেন্ট বিল্ডার হিসেবে ইউনিলিভার কয়েক প্রজন্ম ধরে খ্যাতনামা অনেক ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছে, যারা দেশে-বিদেশে কেবল ইউনিলিভারেই নেতৃত্ব দিচ্ছে না, অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় নানান প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কারণে ইউনিলিভার সবার কাছে ‘স্কুল অব লিডারস’ নামেও পরিচিত।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার সহ সমমনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইউনিলিভার যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, বইটিতে সেটাও তুলে ধরা হয়েছে। ইউনিলিভার এমন অনেক ব্যবস্থা ও কার্যক্রম চালু করেছে, যেগুলো বাংলাদেশের শিল্পখাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে অনপ্রাণিত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
এসএমএকে/এমআরএ