ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পারিবারিক চাপ সামলাতে শিশু চুরি করেন নিঃসন্তান আল্পনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
পারিবারিক চাপ সামলাতে শিশু চুরি করেন নিঃসন্তান আল্পনা সংবাদ সম্মেলন

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে পৃথক দুটি হাসপাতাল থেকে দুই শিশু চুরি যাওয়ার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সংঘবদ্ধ কোনো চক্র নয়, মা হওয়ার ইচ্ছা পূরণের জন্যই শিশু দুটিকে চুরি করা হয়েছে-তদন্তে এমন তথ্যই বের হয়ে এসেছে বলে জানায় পুলিশ।

 

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. হাসিবুল আলম।

তিনি বলেন, শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে দ্বিতীয় শিশুটি চুরির পর রাতেই সলঙ্গা থানার আলোকদিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে একটি শিশুকে জীবিত ও অপরটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় আল্পনা খাতুন (২৪), তার মা ছায়ারন (৫৫), ভাই রবিউল ইসলাম (৩০), ভাইয়ের স্ত্রী মায়া খাতুন (২০), চাচী মিনা খাতুনকে (৫২) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  

পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকদের থেকে জানা গেছে এ চুরির সঙ্গে সংঘবদ্ধ কোনো চক্র জড়িত নয়। নিঃসন্তান হওয়ায় পারিবারিক চাপ সামলাতে আল্পনা খাতুন শিশু চুরির পরিকল্পনা করেন।  

ঘটনার বিবরণ দিয়ে এসপি বলেন, বিয়ের ৭ বছরেও মা হতে পারেননি আল্পনা খাতুন। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছিল। পারিবারিক চাপ সামলাতে নিজেকে গর্ভবতী প্রচার করে আল্পনা। একপর্যায়ে সন্তান প্রসবের কথা বলে বাবার বাড়ি আলোকদিয়া গ্রামে আসেন। সেখান থেকেই নিজে মা হওয়ার জন্য সন্তান চুরির পরিকল্পনা করেন।  

প্রথম পরিকল্পনায় তিনি সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি হাসপাতালে যাতায়াত করে এক কর্মচারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ওই কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেই মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালে যান আল্পনা। দুপুরের দিকে শিশু ওয়ার্ডে মাহিম নামে ২৯ দিন বয়সী শিশুটির মা মঞ্জুয়ারার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।  

একপর্যায়ে মঞ্জুয়ারা তাকে ভরসা করে ছেলেকে রেখে বিভিন্ন কাজে বাইরে যান। সুযোগ বুঝে শিশু মাহিমকে ইনকিউবেটর থেকে নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর বাবার বাড়ি অবস্থান করতে থাকেন আল্পনা। পরদিন শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে পল্লী চিকিৎসক শরিফুলের মাধ্যমে ইনজেকশন দিতে থাকেন।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শিশুটি মারা গেলে আল্পনা তার মরদেহ ধানের গোলায় লুকিয়ে ফেলেন। এরপর আবারও বোরখা পরে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় সাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতালে গিয়ে শিশু চুরির পরিকল্পনা করতে থাকে। ওখানে গিয়ে সামিউল নামে নবজতাক শিশুর নানি জয়নবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে শিশুটিকে কোলে নিতে চাইলে জয়নব সরল মনে তার কোলে দেন। কিছুক্ষণ পর আল্পনা জয়নবকে বলেন নার্স ডাকছে। তার কথায় সরল মনে জয়নব ভেতরে গেলে এ সুযোগে আল্পনা শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান।  

২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম শিশুটি চুরির পর থেকে সদর থানা পুলিশ, ডিবি, পিবিআই ও র‌্যাব সদস্যরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাতে থাকে। এ অবস্থায় ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় শিশু চুরির পর সলঙ্গা থানা পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজনের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে শিশু দুটিকে উদ্ধার এবং মূল হোতা আল্পনা খাতুনকে গ্রেফতার করে। দুটি শিশু চুরির ঘটনায় মোট ৮ জন আটক রয়েছে। তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম।  

জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা মাহিম নামের ২৯ দিন বয়সী একটি শিশু চুরি ঘটনা ঘটে। এর ঠিক ৪ দিন পর শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাটিকুমরুল গোলচত্বরের শাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে সামিউল নামে একদিন বয়সী একটি নবজাতক চুরি হয়। ওইদিন রাতেই আলোকদিয়া গ্রাম থেকে একটি শিশুকে জীবিত ও অপরটি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।  

** হাসপাতালে থেকে চুরি যাওয়া শিশুর মরদেহ উদ্ধার
** সিরাজগঞ্জে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।