ঢাকা: করোনা ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ১৬ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর জন্য প্রায় এক বছর ধরে স্কুল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি, প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বা প্রতি ৭ জনের মধ্যে একজন ব্যক্তিগত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে।
বুধবার (৩ মার্চ) ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইউনিসেফের স্কুল বন্ধ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ১৪টি দেশের বেশিরভাগ স্কুল ২০২০ সালের মার্চ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এই দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের, যেসব দেশে প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ স্কুলগামী শিশুর ওপর এর প্রভাব পড়েছে। এই ১৪ দেশের মধ্যে পানামাই সবচেয়ে বেশিদিন স্কুল বন্ধ রেখেছে এবং এর পরে এল সালভাদোর, বাংলাদেশ ও বলিভিয়া রয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, আমরা যখন কোভিড-১৯ মহামারির এক বছর পূর্তির দিকে এগোচ্ছি, তখন বিশ্বব্যাপী শিক্ষাক্ষেত্রে লকডাউন যে ভয়াবহ জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়। যতই দিন যাচ্ছে, শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে ততই পিছিয়ে পড়ছে, যেখানে সবচেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা শিশুদের সবচেয়ে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। কাজেই আমরা এমন আরও একটি বছরে পদার্পন করতে পারি না, যেখানে শিশুরা স্কুলে হাজির হয়ে শিক্ষা গ্রহণের সীমিত সুযোগ পাবে বা একেবারেই পাবে না। স্কুলগুলো খোলা রাখার বিষয়ে বা পুনরায় খোলার পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রচেষ্টা বাদ রাখা উচিত নয়।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, আমরা ৩০ মার্চ স্কুল পুনরায় চালু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। অন্য উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে ইউনিসেফ বিদ্যালয়গুলো নিরাপদে পুনরায় চালু করতে সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে।
শিশুদের পড়াশোনা ও সার্বিক সুস্থতার ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতি ধ্বংসাত্মক। সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা এবং যারা দূরশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না তারা আর কখনও ক্লাসরুমে ফিরতে না পারার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকী শিশুবিয়ে বা শিশুশ্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।
ইউনেস্কোর সবশেষ তথ্য অনুসারে, পুরোপুরি ও আংশিকভাবে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বব্যাপী ৮৮ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর পড়াশোনা অব্যাহতভাবে বাধার মুখে পড়ছে।
বিশ্বব্যাপী স্কুলগামী শিশুদের বেশিরভাগই এমন এক স্থান হিসেবে তাদের স্কুলগুলোর ওপর নির্ভর করে যেখানে তারা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, সহায়তা চাইতে পারে, স্বাস্থ্য ও টিকাদান পরিষেবা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে। যত বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকবে, তত বেশি সময় ধরে শিশুরা তাদের শৈশবের এই গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২১
টিআর/এএ