রাজশাহী: রাজশাহীতে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে চালের দাম। পাইকারি এবং খুচরা বাজারে একই অবস্থা।
রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। চালের দাম বাড়তে থাকায় নিম্ন, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আর পাইকারী বাজার ধরতে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হচ্ছে বাড়তি পুঁজি।
তবে চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে চালের সংকটের ফলে দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের জন্য ওপেন এলসির সুযোগ না থাকায় চাল আমদানি করতে পারছেন না তারা। এতে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। আগামী বৈশাখ- জৈষ্ঠ্য মাসে নতুন ধান উঠলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজারে পাইকারি এবং খুচরা চালের আড়তগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের তুলনায় আঠাশ চালের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৪ টাকা।
তবে মহানগরীর পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি বস্তার দাম ২ হাজার ৮শ’ টাকা। এই চালের দাম আগে ছিলো ২ হাজার ৫শ’ টাকা।
বাসমতি চালের দাম বস্তাপ্রতি ৬শ’ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪শ’ টাকা। এতে খুচরা বাজরেও দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন টাকা করে। বাসমতি এখন ৬৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
পাইকারি বাজারে জিরাশালের দাম ৩শ’ টাকা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮শ’ টাকা। আর খুচরা বাজারে দুই টাকা বেড়ে দাম হয়েছে ৫৮ টাকা।
মিনিকেটের দাম দুই টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৮ টাকা। পাইকারি বাজারে এর দাম ৩ হাজার টাকা। এর আগে দাম ছিলো ২ হাজার ৮শ’ টাকা।
বাড়তি দাম নাজিরশাল আর স্বর্ণারও। নাজিরশালের দাম ২ হাজার ৬শ’ টাকা থাকলেও এখন ৪শ’ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। স্বর্ণার দাম ২শ’ টাকা করে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২শ’ টাকা। খুচরা বাজারে নাজিরশালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা।
চিকন চালের পাশাপাশি মোটা চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্মআয়ের মানুষের। সাহেব বাজারে চাল কিনতে আসা রিকশাচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহ খানেক আগেও মোটা চাল কিনেছি প্রতি কেজি ৩০-৩২ টাকায়। কিন্তু সেই চালই আজ ৩৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। দ্রুত চালের দাম বাড়ায় আমরা মহাবিপাকে পড়েছি।
একই বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ২শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করতে পারছেন না বলছেন। খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চাল ছাড়ছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে দরে কেনা হয়েছে তা সামান্য লাভে বিক্রি করছি।
বাড়তি চালের দামের বিষয়ে সাহেব বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আফতাব আলম বলেন, সারাদেশে হাতেগোনা কয়েকজন আমদানিকারককে এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বড় বড় সুযোগ পেলেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা পাননি। এখন যারা ভারত থেকে চাল আনছেন তারা চাল মজুদ করে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছেন। ফলে চাল আমদানি করেও দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ওপেন এলসির সুযোগ নেই বলেই চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
রাজশাহী পাইকারী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এলসি খোলার সুযোগ পাইনি। সরকার ওপেন এলসির সুযোগ না দিলে চালের দাম এত সহজে নিয়ন্ত্রণে আসবে না। তাই এর প্রভাবে এখন প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়তে পারে। তবে নতুন চাল কয়েক মাস পরে বাজারে এলে দাম কমতে পারে বলেও আশার কথা বলেন এই ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২১
এসএস/এমআরএ