ঢাকা: রাইদা পরিবহনের চলন্ত বাস থেকে শিশু মরিয়ম আক্তারকে (১০) ফেলে হত্যার ঘটনায় চালক রাজু মিয়া ও তার সহযোগী ইমরান হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
র্যাব জানায়, নিহত মেয়েটি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিল। ঘটনার দিন সে সাহায্য চাইতে বাসটিতে উঠেছিল। হেলপার এ সময় তাকে ‘গেটলক বাস’ বলে বাস থেকে তাকে ফেলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মরিয়মের মৃত্যু হয়।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বিবরণে র্যাব জানায়, ঘটনার দিন সকালে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশের রাস্তায় উত্তরাগামী রাইদা পরিবহনের বাস থেকে মরিয়মকে ফেলে দেয়। পরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা রনি মিয়া অজ্ঞাতপরিচয় চালককে আসামি করে ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মরিয়ম তার পরিবারের সঙ্গে খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করত। তার বাবা রনি একজন প্রাইভেটকারচালক। মরিয়ম ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তবে, অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করত। ঘটনার দিন সকালে মরিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পথচারী ও বাস যাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ অনুযায়ী তিনি বলেন, দেখা গেছে মরিয়ম হেঁটে হেঁটে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফ্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম মরিয়মকে আহতাবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায়, এখানেই মৃত্যু হয় শিশু মরিয়মের।
তিনি আরো বলেন, অর্থ সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে উঠেছিল মরিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে উঠা এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় ঘাতক চালক এবং হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং নজরদারি আরও বাড়ানো হয়। এরপরই পৃথক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তারাই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।
গ্রেফতার দুইজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, চালক রাজু মিয়া এবং হেলপার ইমরান হোসেন প্রতিদিনের মতই রাইদা পরিবহনের বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯০২২) নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকালে স্বল্প সংখ্যক যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় তারা দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। বাসটি প্রগতি সরণি যমুনা ফিউচার পার্কে পৌঁছালে মরিয়ম বাস যাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইতে গাড়িতে ওঠে। হেলপার ইমরান এ সময় যাত্রীদের কাছে ভাড়া নিচ্ছিলেন। ইমরান তখন চালককে শিশুটিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে চালক রাজুকে গাড়ির গতি কমাতে বলেন। এ সময় মরিয়মকে দরজার কাছে গিয়ে নেমে যেতে বলা হয়। চালক রাজু কিছুদূর না যেতেই আবার থামতে বলায় বিরক্তিতে বাসের গতি হালকা কমিয়ে, মরিয়মকে তাড়াতাড়ি নামতে বলে। মরিয়ম তাড়াহুড়ো করে নামার সময় হঠাৎ বাসচালক জোরে চালানো শুরু করেন। এতে মরিয়ম বাসের দরজার থেকে ছিঁটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতবেগে দিয়াবাড়ির দিকে চলে যায়। এরপর পোস্তগোলায় হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে গাড়িটি রেখে, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিষয়টি কাউকে না বলে আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতার চালক রাজু ছয় বছর রাইদা পরিবহনে গাড়ি চালাতেন। আর তার সহযোগী (হেলপার) ইমরান হোসেন আগে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। ছয় মাস আগে ইমরান রাইদা পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে।
এদিকে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা এমন প্রশ্নে কমান্ডার আল মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। আমরা প্রায় অর্ধশতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বাসটিকে শনাক্ত করেছি।
বাসটির চালকের সঠিক কাগজপত্র ছিল কিনা জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে তাদের সব কাগজপত্র সঠিক ছিল। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আমরা তদন্ত করব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, বাসটি গেটকল সার্ভিস ছিল। তাই মেয়েটিকে হেলপার প্রেসার করেছিল, যেন দ্রুত নেমে যায়। নিহত মরিয়ম বাস থেকে নামানোর সময় বাসের গতি ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে সে বাস থেকে রাস্তায় পড়ে মারা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২১
পিএম/এএটি