বরিশাল: বরিশাল নগরের দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকায় ১৪ বছরের এক কিশোরী গৃহপরিচারিকাকে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) রাতে ওই এলাকার হাজী বাড়ি সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ওই গৃহপরিচারিকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দিনগত রাতে গৃহপরিচারিকাকে প্রকাশ্যে মারধর করছিলেন নগরের বাইতুল যুননুরাইন বাড়ির মালিক ও শিক্ষক এ কে এম হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী। এ সময় হুমায়ুন কবিরও সেখানে দাঁড়িয়ে ওই কিশোরী শিশু গৃহপরিচারিকাকে বকাঝকা করছিলেন। বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের সামনে ঘটলেও হুমায়ুন কবিরের জামাতা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় কেউ তাতে বাধা দেয়নি, তবে গোপনে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেছে প্রতিবেশীরা।
মারধরের শিকার কিশোরী জানায়, সে নেত্রকোনার দুর্গাপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। কিছুদিন আগে ওই বাসাতে সে কাজ শুরু করে। নানু (হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী) এরমাঝেই কয়েকবার তাকে মারধর করেছেন। সর্বশেষ তিনি বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা চুরির অভিযোগ তুলে তাকে মারধর করলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
আশাপাশে আশ্রয় চাইলেও হয়রানির শঙ্কায় তাকে কেউ আশ্রয়ও দিতে রাজি হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে গৃহকর্তার বাসার সামনে দাঁড়িয়েছিল সে। এ সময় স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা নেওয়ার অপবাদ দিয়ে নানু (হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী) তাকে প্রকাশ্যে রাস্তায় চুলের মুঠি ধরে মারধর করেন। এতে সে মুখে, মাথায়, হাতে ও পায়ে আঘাত পেয়েছে বলে জানায়।
মারধরের শিকার কিশোরী আরও জানায়, আজ নানু ও তমা আন্টি তাকে মারধর করলেও নানা (হুমায়ুন কবির) শুধু বকাঝকা করেছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী জানান, গত শনিবার (৬ নভেম্বর) ওই কিশোরী তাদের বাসায় কাজ শুরু করে। তাকে তার নাতনিকে দেখভালের জন্য বাড়িতে আনা হয়েছে। হৃদয় নামে এক ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিন ওই ছেলের সে কথা বলে। তার সঙ্গে চলে যাওয়ার কথা শোনার পর থেকেই তারা বিপাকে রয়েছেন।
এছাড়া হুমায়ুন কবিরের দাবি করেছেন, কখনো তিনি ওই গৃহপরিচারিকাকে মারধর করেননি। আর তার স্ত্রী বলছেন, আজ ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন এজন্যই দুইটা (থাপ্পড়) দিয়েছেন। এছাড়া ওই গৃহপরিচারিকা পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় তাদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ওই শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যরা। শিক্ষকের মেয়ের জামাতা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হওয়ায় এ বিষয়ে স্থানীয় কাউকে নাক না গলানোর হুঁশিয়ারি দেন তারা।
তবে ওই দম্পতি দাবি করেছেন, তারা কাউকে কোনো ভয়ভীতি দেখাননি, তাদের কিছু জিনিস ও গহনা নিয়ে গেছে ওই কিশোরী শুধু এটাই বলেছি।
এদিকে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কিশোরীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভুঞা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ওই গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখেছি। তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়া তাদের থানায় আসতে বলা হয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২১
এমএস/আরআইএস