ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কেমন আছে ‘সিডর বেবী’

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
কেমন আছে ‘সিডর বেবী’ সিডর বেবী মারিয়া ও তার মা জাকিয়া

পাথরঘাটা (বরগুনা): ১৪ বছর পেরিয়ে গেছে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের। কেউ ভোলেনি সেদিনের কথা।

বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা আজও সেই স্মৃতিতে শিহরিত হয়ে ওঠে। সিডর অনেক সাক্ষী রেখে গেছে উপকূলে। তেমনি ঘূর্ণিঝড় সিডরের সঙ্গে শিশু সিডরকেও মনে রেখেছেন অনেকে। সেই সিডর বেবীর নাম মারিয়া। এলাকায় সে অবশ্য ‘সিডর বেবী’ বলেই পরিচিত।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে দেশের উপকূলীয় ১১টি জেলায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে জন্ম হয় তার। সিডর বেবী আজ ১৪ পেরিয়ে ১৫ বছরে পা দিল।

কেমন আছে সেই সিডর বেবী? খোঁজ নিতে সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর  পাড়ের পদ্মা গ্রামে গিয়ে কথা হয় সিডর বেবীর সঙ্গে। তার আসল নাম মারিয়া আক্তার। সিডরের রাতে জন্মগ্রহণ করায় তাকে সবাই সিডর বেবী হিসেবেই চিনে। এতোদিনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে তার। সিডর যোদ্ধা এই শিশুর আজ ১৪ বছর পেরিয়ে গেছে। বিয়েও হয়েছে তার। তের বছরের মাথায় এসে থেমে যায় তার স্বপ্ন, অধিকার বঞ্চিত হয় মারিয়া। দারিদ্রতার অভিশাপে লেখাপড়াও হয়নি। মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ইতি টানতে হয়েছে।

সিডরের দিনে অনেকের সঙ্গে মারিয়ার বাবা ফারুক মোল্লা, নানা মোস্তফা মিয়া ও নানি ফুলবরু আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে রওনা হয়। অন্তঃসত্ত্বা জাকিয়া বেগম ঝড়ো হাওয়ায় বাবা মোস্তফার হাত থেকে ছুটে গিয়ে হারিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ায় বাবা মোস্তফা অন্যদের আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর খুঁজে পায় জাকিয়াকে। অনেক কষ্ট করে জাকিয়াকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার পরপরই প্রসব বেদনা শুরু হয়। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অন্য নারীদের সহায়তায় রাত ১১টার দিকে আশ্রয়কেন্দ্রে জাকিয়া জন্ম দেন ফুটফুটে এক শিশুকে। কন্যা শিশু হওয়ায় নাম রাখা হয় ‘সিডর বেবী’। পরদিন বাড়িতে এসে দেখে ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে জলোচ্ছ্বাস।

পদ্মা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় সিডর বেবীর পরিবারের সঙ্গে। নানা মোস্তফা মিয়ার জমিতে ত্রাণে পাওয়া ঘর করে মায়ের সঙ্গে থাকে মারিয়া। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ায় স্বামীও তাদের সঙ্গেই থাকেন। তেমন একটা ভালো কাটছে না সিডর বেবীর জীবন। উপকূলীয় এলাকার অন্য পরিবারগুলোর মতো তার পরিবারও অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছে। স্বামী নয়ন মিয়াও একজন মৎস্য শ্রমিক। দিনমজুর বাবার দুই সংসার হওয়াতে তেমন খোঁজ খবর নিতে পারে না তাদের। বাবার দুই সংসারে মারিয়াসহ ৪ বোন। এর মধ্যে মারিয়া বড়। বাবা-মাসহ নানা-নানির মমতায় থাকলেও অনেকটা অধিকার থেকে বঞ্চিত সিডর বেবী। অর্থাভাবে সিডর বেবীর জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন পরিবার।

ঘূর্ণিঝড় জয়ী সিডর বেবী বলে, আমি যখন বুঝতে শুরু করেছি তখন থেকেই নানা-নানি, বাবা-মায়ের কাছে আমার পৃথিবীতে আসার গল্প শুনেছি।  

সিডর বেবী বলে, আমার অনেক স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে বড় হবো। কিন্তু বাবার অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। তাছাড়া অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়।

মা জাকিয়া বেগম বলেন, সিডরের রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় যখন বাবার হাত থেকে আমি ছুটে যাই তখন বাঁচা-মরা নিয়ে আমার কোনো ভাবনাই ছিল না। একটাই চিন্তা ছিল পেটের বাচ্চাটার কি হবে। অনেক চিৎকার করেছি কিন্তু রাতে প্রচণ্ড বাতাসে কেউ শুনতে পায়নি। পরে আমার বাবাই আমাকে খুঁজে পায়।

তিনি আরও বলেন, যখন আমাকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তখন পেটের ব্যথা আর সহ্য করতে পারছি না। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মাসহ কয়েকজন প্রতিবেশী নারীর সহায়তায় মারিয়ার জন্ম হয়।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক জানান, মারিয়ার পরিবারের দিন কাটছে খুব কষ্টে। আমাদের সাধ্য মতো সাহায্য দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের কাছে তিনিও মারিয়াদের জন্য একটি আবাসনের দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।