চাঁপাইনবাবগঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘর উপহার দিচ্ছেন। ঘুষ দিতে না পারায় নিজের নামে বরাদ্দের ঘর চলে গেছে অন্যের দখলে।
ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. কামালউদ্দিন মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে উপহারের ঘরের তালিকায় থাকা গৃহহীন মোমেনা খাতুনের নাম কেটে বরাদ্দ দিয়েছেন মমতাজের নামে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ তার জন্য বরাদ্দকৃত বাড়ি মেম্বার বিক্রি করছেন মমতাজের কাছে। বিষয়টি জানার পর মোমেনাকে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
জানা গেছে, ভোলাহাট উপজেলার হলিদাগাছী থেকে গোহালবাড়ীহাট সরকারি রাস্তার পূর্ব পাশে বসবাস করে আসছিল ভূমিহীন গৃহহারা অর্ধশত পরিবার। উচ্ছেদ অভিযানে সব বাড়ি উচ্ছেদ করা হলে তারা আশ্রয় নেয় অন্যের বাড়ি, আমবাগান ও স্বজনের বাড়িতে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২য় পর্যায়ে বরাদ্দকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণীর পুনর্বাসিতব্য পরিবারের জন্য ভোলাহাটে ৪১১টি ঘর দেওয়ার ঘোষণা আসে। তালিকা করা হয় উচ্ছেদ হওয়া এ সবগুলো গৃহহীন পরিবারের নামে। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থানীয় গোহালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. কামাল উদ্দিন আবেদন ফরম পূরণ, অঙ্গীকার নামা ছবিসহ যাবতীয় কাজ করেন।
উপকারভোগীদের চূড়ান্ত তালিকা করার পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমাও হয়। মোমেনা খাতুনের নামে চূড়ান্ত তালিকায় নামও ওঠে। যার ক্রমিক নম্বর ১৪৪। স্বামী শাহজামাল, গ্রাম গোহালবাড়ী জাতীয় পরিচয়পত্র নং৭০১১৮৫৬৬৫৮৯৬২।
কিন্তু এরপরই বাধে বিপত্তি। মেম্বার মো. কামালউদ্দিনের চাহিদা মত টাকা দিতে না পারায় মোমেনার জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মমতাজ বেগমকে (মোমেনা) (স্বামী মো. আব্দুল হামিদ জামাল, গ্রাম গোহালবাড়ীকে) তার ঘরে তুলে দেন। অন্যদের ভাগ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার জুটলেও গৃহহারা মোমেনা খাতুন প্রধানমন্ত্রীর উপহার না পেয়ে আবারও সরকারি রাস্তার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে কোনো রকম মাথা গোজার ঠাঁয় করে নেন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে সংসার চালাই। সরকারি জমিতে কুঁড়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছিলাম। অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের সময় আমার বাড়ি ভেঙে দেয়। আমি অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। ঘরটি আমাকে না দিয়ে টাকার বিনিময়ে মমতাজ বেগম নামে একজনকে দিয়েছেন মেম্বার মো. কামালউদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, আমি ইউএনও স্যারকে আমার বাড়ি বুঝে পাওয়ার জন্য সেপ্টেম্বর মাসে দরখাস্ত দিয়েছিলাম। তারপরও বাড়িতে উঠতে পারিনি। ইউএনও স্যার আর উপজেলা চেয়ারম্যান ৩১ অক্টোবর এসে কামাল উদ্দিন মেম্বারকে ভোটার আইডি কার্ড জাল করে মমতাজকে আমার ঘরেতে উঠানোর জন্য ধরে নিয়ে যায়। পরে আমাকে আবারও বাড়ি দেওয়ার কথা বলে ৮ হাজার ও ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে ইউএনও অফিস থেকে ছুটে আসেন। তবে এখনও আমি সে বাড়ি পাইনি।
এদিকে মমতাজ বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ভোটার আইডি কার্ড মেম্বার মো. কামাল উদ্দিনকে দিয়েছিলাম। জাল করে থাকলে তিনি বলতে পারবেন।
অপরদিকে অভিযুক্ত কামালউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি, মোমেনা খাতুনের বাড়ি মমতাজ বেগমকে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আর ভোটার আইডি র্কাড জালিয়াতির ব্যাপারে মুখ খোলেননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের জানান, ব্যাপারটি আমি জানার পর মমতাজ বেগমের বসবাস করা বাড়ির জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ করে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে সমীর কুমার পাল জানান, মমতাজ বেগম মোমেনা এবং মোমেনা খাতুনের নাম একই রকম হওয়ায় এ ধরনের একটি সমস্যা হয়েছে। তবে যেহেতু দুইজনই ভূমিহীন ও হতদরিদ্র এ জন্য ভুলক্রমে প্রাপ্ত মমতাজের পাওয়া বাড়িটি তার নামেই বরাদ্দ এবং দ্রুত মোমেনার জন্য বাড়ি বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্ত ওয়ার্ড সদস্য কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
আরএ