ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তরুণদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করাই হাসিবুরের পরিকল্পনা ছিল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
তরুণদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করাই হাসিবুরের পরিকল্পনা ছিল

ঢাকা: নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব (২১) ছিলেন সংগঠনের দাওয়াত শাখার প্রধান। অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সংগঠনের মতাদর্শের বিভিন্ন উগ্রবাদি পোস্ট দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল তার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য।

 

রোববার (১৫ নভেস্বর) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি)  মো. আসাদুজ্জামান।  

এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানাধীন আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিবকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।  

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সাল থেকে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়দার মতাদর্শকে সমর্থন করে আযযাম আল গালিব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি শুরু করেন। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ও উগ্রবাদী লেখা পোস্ট  করে রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারণা শুরু করেন।  

গ্রেফতার জঙ্গি সদস্য হাসিবুর রহমান পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এলএলবি (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র।

অনলাইন জঙ্গিবাদের কথিত ত্রিরত্ন খ্যাত একরত্ন এই হাসিবুর রহমানকে গ্রেফতার করায় অনলাইনে জঙ্গিবাদ প্রচারণা ৮০ শতাংশ কমে আসবে বলে দাবি করেছে সিটিটিসি।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান দাবি করে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়দার মতাদর্শকে সমর্থন করে আযযাম আল গালিব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি শুরু করেন। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ও উগ্রবাদী লেখা পোস্ট করে রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারণা শুরু করেন।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসিবুর জানায়, তিনি নিষিদ্ধ ঘােষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ্ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি পাশের পর ঢাকা অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ারত অবস্থায় সহিংস উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের আদর্শে দীক্ষিত হয়। ওই সময় তিনি বিপুল পরিমাণে উগ্রবাদী বই পড়তে শুরু করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘােষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী আইডি Zamil Hasan ও Md Jamsed Hossain আইডি দুটির সঙ্গে যুক্ত হয়। এই আইডিগুলােতে তালেবান ও আল কায়েদা বিষয়ে বিভিন্ন লেখালেখি হতাে এবং বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করতেন।  

তিনি বলেন, এরপর ২০১৯ সালের দিকে তিনি আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার মতাদর্শ সমর্থন করে লেখালেখি শুরু করে এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, সংবিধান, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহের ব্যাপারে বিভিন্ন পােস্টের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরােধী ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা শুরু করে। এসব বিষয় প্রচার করার জন্য তিনি প্রথমে আযযাম আল গালিব নামে ফেসবুকে আইডি খুলে এবং এই নামেই টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে পক্ষে লেখালেখি শুরু করে। এর পাশাপাশি সে ফেসবুকে Muwahhid Muslim নামে একটি পেইজ পরিচালনা করে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহের জন্য দাওয়াত দিতে বলে জানায়।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় উগ্রবাদী মতবাদ ছড়ানাের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার একাধিক আইডি ডিজেবল করে দিয়েছে। সর্বশেষ তিনি আব্দুল্লাহ গালিব আযষাম নামে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। এছাড়াও কারাগারে আটক আনসার আল ইসলাম সদস্যদের জামিনের জন্য তিনি গােপনে মােবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এবং কারাগারে আটক আনসার আল ইসলাম সদস্যদের পরিবারের সঙ্গে যােগাযােগ করে সংগ্রহ করা অর্থ তাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।

গ্রেফতার হাসিবুর রহমানের কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট পাওয়া যায়।

সাম্প্রতিক ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন সিদ্দিবী ও নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলার আগে সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার হন।

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার হাসিবের ফেসবুক আইডিতে জিহাদসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন সব কন্টেন্ট ছিল, যার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার আইডিটি বন্ধ করে দেয়।

এর আগেও গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের জামিনের চেষ্টা করেছে হাসিব। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে সে তাদের পরিবারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।

হাসিবের গ্রেফতারের পর আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ শাখার নেতৃত্ব দিবে কে এ প্রসঙ্গে কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কি-না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার হাসিব জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আর কারা কারা রয়েছে সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

হাসিবুর রহমান কীভাবে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি প্রথমে ফেসবুকে আনসার উল ইসলাম ও আল কায়েদা বিষয়ক প্রচারণা চালানো জামিল হাসান ও জামশেদ হোসেন নামের দুইটি আইডির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই দুইটি আইডির বিভিন্ন কন্টেন্টের মাধ্যমে সে এ ধরনের কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই দুইটি আইডিও বন্ধ করে দিয়েছে।

গ্রেফতার জঙ্গি সদস্য হাসিবুর রহমানকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালকে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১ আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা
এসজেএ/এনটি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।