ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাকা-জমি আত্মসাতেই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
টাকা-জমি আত্মসাতেই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে হত্যা কথা বলেছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ও ইনসাটে আনোয়ার শহীদ।

ঢাকা: ‘বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদের (৭২) পাওনা ১২ লাখ টাকা ও জমি আত্মসাৎ করতেই জাকির হোসেন হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ভুক্তভোগীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন’।



রোববার (১৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় র‍্যাব-২ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জাকির হোসেন (৩৭) এবং সাইফুল ইসলামকে (২৬) গ্রেফতার করে।

এর আগে, ১১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার পর শ্যামলী হলিলেন এলাকায় আনোয়ার শহীদকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় এক দুর্বৃত্ত। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত আনোয়ারের ছোট বোন ফেরদৌস সুলতানা (৫৯) আদাবর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনবহুল রাস্তায় প্রকাশ্যে নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ব্যাপক সমালোচিত হয়। র‌্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। গ্রেফতার আসামিরা।  ছবি: বাংলানিউজসোমবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর অভিযানে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেন।

খন্দকার মঈন বলেন, নিহত আনোয়ার শহীদ ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেই আনোয়ার শহীদের সঙ্গে জাকিরের পরিচয় হয়। পরে তাদের ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। দিনাজপুরে জমি কেনার সময় জাকির আনোয়ার শহীদকে সহযোগিতা করেন। জাকির জমির দালালিও করেন এবং জমির কিছু কাগজ জাকিরের কাছে রয়েছে। জাকিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হওয়ায় আনোয়ার বিভিন্ন সময় তাকে ১২ লাখ টাকা ধার দেন। এই টাকা ফেরত না দিতে এবং দিনাজপুরে আনোয়ারের জমি আত্মসাৎ করতেই হত্যার পরিকল্পনা করেন জাকির।

তিনি বলেন, আনোয়ার অবসরের পর ঢাকায় বসবাস শুরু করলেও ঘনিষ্ঠতার সুবাদে জাকিরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ হতো। এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে ভিকটিমের সহযোগিতা চায়। আনোয়ার তাকে সহযোগিতা করতে অপারগতা জানায়। এ নিয়েও জাকিরের ক্ষোভ ছিল। পরে আনোয়ার শহীদকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। যাতে তার টাকা ফেরত না দিতে হয়।  পরিকল্পনা অনুযায়ী জাকির তার চালের আড়তের কর্মচারী সাইফুলের সঙ্গে হত্যার নকশা তৈরি করেন। সাইফুল একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। সাইফুল জাকিরের প্রস্তাবে রাজি হন।  

র‍্যাব মুখপাত্র আরও বলেন, আনোয়ারকে হত্যার উদ্দেশ্যে জাকির ও সাইফুল ১১ নভেম্বর সকালে তারা দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আসেন। তারা কল্যাণপুর এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। ওইদিন বিকেলে আনোয়ারকে ফোন করেন জাকির। তারা দেখা করেন শ্যামলীতে। এরপর মিরপুর যায়। সেখানে কিছু কেনাকাটা করেন। এরপর সেখান থেকে ফের দুইজনে শ্যামলীতে আসেন। তাকে হলিলেন গলিতে নিয়ে যায় জাকির। সেখানে আগে থেকেই ওঁৎপেতে ছিলেন সাইফুল। জাকির গলিতে যাওয়ার পরই সাইফুলকে চোখের ইশারা দিয়ে আনোয়ারকে দেখিয়ে দেয়। এরপর সাইফুল তাকে ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাত করার পর জাকির প্রথমে আনোয়ারকে ধরে মাটিতে শুয়ে দেয় এবং পথচারীরা এলে তিনি সটকে পড়েন। এরপরে সাইফুল ও জাকির দুইজনেই হোটেলে যায়। সেখান তারা মিলিত হয়। রাত ৮টায় কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুর যাওয়ার টিকিট নেয়। কাউন্টারে এসে দিনাজপুরের এক পরিচিত ব্যক্তি জাকিরকে জানান আনোয়ার মারা গেছেন। তখন জাকির সন্দেহ এড়াতে তার টিকিট সময় চেঞ্জ করে ৯টায় নেয় এবং আনোয়ারকে দেখতে যায়।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বিষয়ে র‍্যাব জানায়, আনোয়ার গম গবেষণাকেন্দ্রে ১৯৭৬ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে পরিচালক পদ মর্যাদায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তার সর্বশেষ কর্মস্থল জয়দেবপুর থেকে অবসর নেন। চাকরি জীবনের সবটুকু সময় তিনি গবেষণার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কর্মস্থলে সামাজিকভাবে অত্যন্ত বন্ধুবৎসল এবং পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আনোয়ার ১৯৮৩ সালে বিয়ে করেন। তবে, তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে তিনি আর বিয়ে করেননি। তার কোনো সন্তান নেই। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায়।

রাজধানীতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে হত্যা, একজন গ্রেফতার

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
এমএমআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।