বগুড়া: অবকাঠামো নির্মাণের প্রায় দুই যুগ পর বাণিজ্যিকভাবে চালুর লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একটি প্রতিনিধি দল বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) পাঁচ সদস্যের একটি দল সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বিমানবন্দর পরিদর্শন করে।
বেবিচক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন উপসচিব ইশরাত জাহান পান্না। এছাড়া সদস্য হিসেবে ছিলেন উপ-পরিচালক (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) মো. মাসুদ রনা, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিনুল হাসিব, সহকারী পরিচালক (সিএনএস) প্রশান্ত কুমার সাহা, সিনিয়র ড্রাফটম্যান কবির হোসেন।
পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দল বগুড়া বিমানবন্দরের জমি, রানওয়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহ, অফিস ও আবাসিক ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত অবস্থার বিষয়ে অবগত হয়। বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করতে জমি ও কিছু অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন প্রতিনিধিরা।
প্রতিনিধি দলের প্রধান উপসচিব ইশরাত জাহান পান্না জানান, প্রাথমিক পরিদর্শন করা হয়েছে। বগুড়ার বিমানবন্দরে কী কী আছে সেটা নোট করা হয়েছে। বিমানবন্দরের জন্য আরও জমি প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করার বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সোমবার বগুড়া বিমানবন্দরের প্রাথমিক বিষয়গুলো পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তারা ঢাকায় ফিরে গেছেন।
বগুড়া-৭ আসনের (স্বতন্ত্র) সংসদ সদস্য (এমপি) রেজাউল করিম বাবলু জানান, পরিদর্শনকালে তিনি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন। পরিদর্শক দল ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। বগুড়া বিমানবন্দরটি যেন বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হয় সে বিষয়ে তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন।
তিনি জানান, বগুড়া বিমানবন্দর চালু করতে কয়েকবার তিনি সংসদে কথা বলেছেন। পরে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে বিমানবন্দর চালু করার বিষয়ে তিনি দেখা করে এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে একটি লিখিত প্রস্তাবনা পাঠান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেন।
এদিকে বিমানবন্দরটি চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-অর্থনীতি, কৃষিসহ সব দিক থেকে এগিয়ে যাবে বগুড়া। কেননা বগুড়ার অনেক কৃষি পণ্য এখন বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। নতুন শিল্পোদ্যোক্তারাও এখানে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালু করা জরুরি। সড়ক পথে ঢাকা থেকে বগুড়া আসতে এখন প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। পথের ভোগান্তির কারণে বগুড়ায় কোনো বিদেশি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও রপ্তানিকারকরা আসতে চায় না। বিদেশি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা না এলে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন তেমন কাজে আসবে না। এছাড়া অনেক মানুষ এখন বগুড়া থেকে সড়ক পথে ঢাকায় যাতায়াত করতে চায় না। তারা বিমানে চলতে চায়।
অন্যদিকে বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়সহ দর্শনীয় ও ধর্মীয় একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে বগুড়ায়। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় যান। আর এরইমধ্যে বগুড়ার পুন্ড্রনগরীখ্যাত মহাস্থানগড়কে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত সেখানে যাবে ও আসবে।
এ জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানার মধ্যে রয়েছে ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস এবং ওয়ান ফার্মাসিটিক্যালস, খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রোডাক্ট, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস প্ল্যান্ট, মোটরসাইকেল সংযোজন প্রতিষ্ঠান উত্তরা মোটরস, এবিসি টাইলস, ছোট বড় অসংখ্য জুট মিলসহ পেপার ও পার্টিকেল বোর্ডের কারখানা। এছাড়া বগুড়ায় চার ও পাঁচ তারকা মানের হোটেল রয়েছে তিনটি। তাই ভৌগোলিক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে দ্রুত বিমানবন্দর চালু করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রসঙ্গত, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য ১৯৮৭ সালে সরকারিভাবে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সেসময় তা বিভিন্ন জটিলতায় আটকে যায়। পরে ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয় এবং ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনও হয়। ১৯৯৫ সালে এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১০৯ দশমিক ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
প্রকল্পটির কাজ ২০০০ সালের দিকে শেষ হয়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে এ বিমানবন্দর থেকে বিমান ওড়েনি। পরে সেখানে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করা হয়। বর্তমানে সেখানে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
কেইউএ/আরআইএস