ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৯ নভেম্বর ঘিরে কমলগঞ্জে মণিপুরী রাসলীলার প্রস্তুতি 

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২১
১৯ নভেম্বর ঘিরে কমলগঞ্জে মণিপুরী রাসলীলার প্রস্তুতি  কমলগঞ্জের মণিপুরী রাসলীলা নৃত্য। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা আগামী শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।  

সম্প্রতি আদমপুরে গিয়ে দেখা গেছে, মণিপুরী অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের রঙ ফুটছে।

মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে রং করানোর কাজ। এলাকার পাড়ায় পাড়ায় চলছে নৃত্যের নানান মহড়া। আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এ দিন পালিত হবে।  

শুক্রবার দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূলপ্রাণ মহারাসলীলা। তাই মণিপুরী পল্লীর বাড়ির উঠোনে চলছে নাচের প্রশিক্ষণ। ছেলে-মেয়েরা নাচছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের অঙ্গভঙ্গিমা। কোনো জায়গায় চলছে রাসনৃত্যের মহড়া। কোনো জায়গায় রাখালনৃত্যের। এগুলো এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি।  

মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব রাসলীলা। রাসোৎসবে মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকজন মেতে উঠবে একদিনের আনন্দ উৎসবে। রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হবে নানান আলোকসজ্জাও। সেখানে মণিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মনমুগ্ধ করে রাখবে সহস্রাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থীদের।  এবার মাধবপুর জোড়মণ্ডপে ১৭৯তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ। ‘মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়’। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।
 
অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে ‘মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়’ আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। এবার হবে ৩৯তম রাস উৎসব। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের মূলকথা হচ্ছে- বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় মাস খানেক ধরে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলছে। ৩টিতে রাসনৃত্য ও ৩টিতে রাখাল নৃত্য। মাধবপুরে ৩টি জোড় মণ্ডপের আওতায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একেকটি মণ্ডপে আছেন একজন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। গোপীবেশী শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর। শুধুমাত্র রাধার বয়স ৫ থেকে ৬ বছর। নৃত্যের প্রতিটি দলে ন্যূনতম ১২ জন অংশ নিয়ে থাকে। একইভাবে রাখাল নৃত্যেরও প্রতিটি দলে ২০ থেকে ২২ জন ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোররা অংশ নিয়ে থাকে।

মাধবপুর মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, মহারাসলীলার মূল উপস্থাপনা শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে। রাসনৃত্যে গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণের মধুরলীলার কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।