ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খেজুরগাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২১
খেজুরগাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা রস সংগ্রহে খেজুরগাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছি

খুলনা: অগ্রহায়ণের মৃদু কুয়াশা ভেজা সকাল, হিমহিম শীতল হাওয়া। কুয়াশার চাদর ভেদ করে চারদিকে রূপালি আলো ছড়িয়ে পড়ছে।

কুয়াশা জড়ানো সৌন্দর্য মণ্ডিত সকালে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছের ডালপালা পরিষ্কার ও গাছের উপরিভাগে ধারালো দা দিয়ে ছিলে রাখতে শুরু করেছেন তারা।

রস সংগ্রহের আশায় বিভিন্ন আঁকা বাঁকা পথের পাশে, ডোবা-পুকুর পাড়ে, জমির আইল, বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জায়গায় ছড়িয়ে থাকা খেজুরগাছ প্রস্তুত করছেন গাছিরা। অপরিচ্ছিন্ন গাছগুলোর পুরানো ডাল পালা কেটে পরিষ্কার করছেন। এরই মধ্যে হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও কাঠি বা নলী বসিয়েছেন অনেক গাছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, খুলনার ডুমুরিয়া, দাকোপ, কয়রা, বটিয়াঘাটা, রূপসা, ফুলতলা, পাইকগাছা, তেরখাদা, দিঘলিয়ায় শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে খেঁজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। গ্রামীণ জনপদের আসন্ন নবান্ন উৎসবের অপরিহার্য উপাদান খেজুরের রস আর গুড়।

খেজুরগাছ প্রস্তুতের সময় কথা হয় ডুমুরিয়ার মৌখালী গ্রামের আলী আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, খেজুরগাছের রস দিয়ে অনেক খাবার তৈরি করা হয়। এখন আর আগের মতো এই গাছ নেই, কমে গেছে। আমি প্রতি বছর ২০০-২৫০টি গাছ কাটি। বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমার কাছ থেকে রস নেন। তারা ফোন দিয়ে মটরসাইকেলে এসে রস নিয়ে যান। পিঠা, খির, পায়েস বানানো, গুড় তৈরি করার জন্য যোগাযোগ করলে আমি রস দিতে পারবো।

ডুমুরিয়া উপজেলার বাদুড়িয়া গ্রামের গাছি আব্দুর রাজ্জাক মোড়ল বলেন, নিজেদের ৩০টির মতো খেজুরগাছ কাটি। এক সময় খেজুর রস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখন গাছ যেমন কমে গেছে, তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও।

একই উপজেলার রাজীবপুরের তরুণ উদ্যোক্তা শরিফুল ইসলাম হিরন বলেন, শীত শুরু হতেই, খেজুরগাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা। অনেক গ্রামেই এখন চোখে পড়ছে খেজুরগাছ পরিচর্যার দৃশ্য। গাছিরা এখন মহা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য প্রাথমিক প্রস্ততি শুরু করেছেন।  

বটিয়াঘাটার মাথাভাঙ্গা কাজী পাড়া সিদ্দীকিয়া জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আগে শীতের সকালে চোখে পড়তো রসের হাঁড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততা। শীত মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন আর তা দেখা যায় না। এলাকায় গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

বটিয়াঘাটা উপজেলার ৬নং বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মিরাজ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, শীত শুরু হতে না হতেই এলাকার কিছু গাছি খেজুরগাছ প্রস্তুতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আগের মত খেজুরগাছ নেই, একই সঙ্গে গাছির সংখ্যাও কমছে। গাছিদের পরবর্তী প্রজন্ম খুব বেশি এই পেশায় আগ্রহী হচ্ছে না। যার কারণে দিন দিন গাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যদিও রসের কদর রয়েছে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।