ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই হচ্ছে রাস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই হচ্ছে রাস

পটুয়াখালী: সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব ও পূর্ণিমা শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সূর্যোদয়ের পূর্বে প্রভাতি আরতি কীর্তনের মধ্যে দিয়ে কুয়াকাটায় শুরু হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব ও পূর্ণিমার আনুষ্ঠানিকতা।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সূর্যোদয়ের পর পূণ্যস্নানের মধ্যদিয়ে এ পূজার সমাপ্তি ঘটবে।

কুয়াকাটা শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম, মন্দির অধ্যক্ষ ব্রাহ্মচারী শিশির মহারাজ বলেন, রাসলীলা বা রাস উৎসব সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি বাৎসরিক উৎসব। রাস মূলত শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান কৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথাবস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায়, দৈনন্দিন জীবনের সুখানুভূতিকে আধ্যাত্মিকতায় এবং কামপ্রবৃত্তিসমূহকে প্রেমাত্মক প্রকৃতিতে রূপ প্রদান করে এই দিনে ভগবান ও ভক্তের একটি মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়।

কুয়াকাটা শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম মন্দিরে এবারের পূজায় প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করবেন শ্রী গৌর চক্রবর্তী। তিনি বাংলানিউজকে জানান, গতকাল রাত ১২টা এক মিনিটে ১৭ জোড়া যুগল প্রতিমা দর্শনের মাধ্যমে এ রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এসময় শাক, উলুধ্বনি এবং নাম কর্তন মুখরিত হয় ওঠ পুরো মন্দির প্রাঙ্গন।

এছাড়াও কলাপাড়ার মদনমাহন সেবাশ্রমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সনাতন ধর্মালম্বীরা রাসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে। পঞ্জিকা মতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ০১ মিনিট শুরু হবে পূর্ণিমা। থাকবে পরদিন দুপুর ১টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত। তাই প্রতিবছরর ন্যায় এবারও পূর্ণিমার এ তিথিতে ভগবান ও ভক্তরা একে ওপরকে অনুভব করে ভগবানের নাম স্মরণ করে সমুদ্র সৈকতে পূণ্যস্নানের মাধ্যমে নিজেকে পাপমুক্ত করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

এখানে আগত ভক্তরা জানান, রাস মেলা হলে আরও আমেজ বাড়ে। করোনা ভাইরাসর সংক্রমণ রোধে এবার হচ্ছেনা মেলা। তারপরও রাস উৎসবে আসতে পেরে আনন্দিত তারা। অনেক পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা পেয়ে আনন্দিত আয়োজকরা। শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম, সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন মন্ডল বলেন, একই মাঠে মসজিদ ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং পাশ্ববর্তী বৌদ্ধ বিহারের সহযোগীতাও পেয়েছেন তারা। এতে কুয়াকাটায় তিন ধর্মের মানুষের একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।

পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, রাস উৎসবকে ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোষাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকেও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন থাকবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

এদিকে উৎসব উপলক্ষে আগত বাড়তি অন্যান্য পর্যটকদের জন্যেও বিভিন্ন ভ্রমণ স্পটে নিরাপত্তাসহ সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ বদরুল কবির।

সারাবিশ্বে চলমান অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে প্রাণিকূলের অস্ত্রবিহীন যুদ্ধ পরিসমাপ্তি হয়ে পৃথিবী হয়ে উঠুক আবারও শান্তিময় এই প্রার্থনা সকলের।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।