ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রেমিকাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন প্রেমিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
প্রেমিকাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন প্রেমিক

ঢাকা: মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে পুলিশের সহায়তায় পরিবার নিশ্চিত হয় মরদেহটি লিপা আক্তার নিপার।

অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ দাফন করা নিপার মৃত্যুর ঘটনায় নরসিংদী সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও দায়ের করা হয়।

পরবর্তিতে নিপার মা কোহিনুর বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি প্রথমে নৌ-পুলিশ তদন্ত করলেও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পিবিআই'র তদন্তে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় পর বেরিয়ে আসে নিপা হত্যাকাণ্ডের রহস্য। বিয়ের পরে পুরানো প্রেমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিরুলের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ হয় নিপার। তাদের সম্পর্কের একপর্যায়ে নিপা গর্ভবতী হয়ে পড়লে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন নিপা।

একদিন রাতে বিয়ের কথা বলে নিপাকে ঘর থেকে নিয়ে যায় আমিরুল। মেঘনা নদীর মধ্যে নৌকায় নিপাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। আমিরুলসহ এ কিলিং মিশনে অংশ নেন মোট সাতজন। এরমধ্যে আমিরুলের বন্ধু সুজন মিয়া ও চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পিবিআই। প্রধান আসামি আমিরুল পলাতক রয়েছেন আর বাকি চারজন বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

গ্রেফতার দুইজনের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তিনি বলেন, আমিরুলের সঙ্গে নিপার দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমিরুলের বাবা তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি, বরং নিপার বাবাকে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিতে সহায়তা করেন। সেখানে নিপা এক বছর সংসার করার পর সেখানে তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

একপর্যায়ে আমিনুল নিপার স্বামীকে তাদের অতীতের প্রেমের কাহিনী বলেন। এতে নিপার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে নিপাকে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। এরমধ্যে নিপার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন এবং নিপার সঙ্গে আমিরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে নিপা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আমিনুল নিপার বাচ্চাটি নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে, এটি সম্ভব হবে না বলে জানায়।

পরে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন নিপা। এরমধ্যে আমিরুল অন্য সহযোগীদের নিয়ে নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর নিপাকে বিয়ের কথা বলে নৌকাযোগে মেঘনা নদীতে নিয়ে যায়। মধ্য নদীতে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং কাঠ দিয়ে এলোপাথারি পিটিয়ে নিপার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা।

পিবিআই'র এই কর্মকর্তা বলেন, নিপাকে হত্যার পর চরের কোথাও মরদেহটি চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তাদের। কিন্তু নদীর সবদিকে জেলেদের উপস্থিতি থাকায় উপায় না দেখে নিপার মরদেহটি নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা। এবং হত্যায় ব্যবহৃত গামছা ও তাদের সঙ্গে থাকা কোদাল নদীতে ফেলে দেয়। এমনকিট নৌকাটিও অন্যত্র বিক্রি করে দেয় জড়িতরা। পরে নৌকাটিকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করতে পেরেছে পিবিআই।

পরে ভাসমান মরদেহটি ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের সহায়তায় মরদেহটি দাফন করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে পরিবার গিয়ে নিপাকে শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করতে গিয়ে পরিবার নানা ধরনের ভয়ভীতির সম্মুখীন হয়। পরে আদালতে নিপার মা কোহিনুর বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

পিবিআই'র এসপি এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, প্রধান অভিযুক্ত আমিরুল বিদেশে পলাতক বলে শোনা যাচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি আমরা এখনো নিশ্চিত নই, আমরা তাকে খুঁজছি। এছাড়া, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকি চারজন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
পিএম/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।