ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ক্রাইম পেট্রোল দেখে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
ক্রাইম পেট্রোল দেখে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা সানজিদা খাতুন।

বগুড়া: বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় সানজিদা খাতুন (৪) নামে এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

এ হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে নিহত সানজিদার বাবা গাবতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নিহত সানজিদা গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামেরর রাজমিস্ত্রী শাহীন প্রামাণিকের মেয়ে।

আটকরা হলেন- বগুড়া গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াদ (১৫) এবং একই এলাকার সাজু প্রামাণিকের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শুভ (১৪)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চার বছর বয়সী সানজিদা বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে বাড়ির উঠানে খেলছিল।  সকাল ১০টার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজা-খুঁজির পরও সন্ধান না পাওয়ায় অনেকে ধারণা করেন ডোবার পানিতে সে তলিয়ে গেছে। এজন্য ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ি সংলগ্ন পুকুর ও ডোবায় তল্লাশি চালিয়ে ফিরে যায়। এরপর ওইদিন দুপুরে একটি মোবাইল ফোন থেকে স্থানীয় এক নারীর মোবাইল ফোনে কল করে সানজিদাকে অপহরণের কথা জানানো হয়। তাকে পেতে হলে মুক্তিপণ হিসাবে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে বলেও জানানো হয়। ওই নারী বিষয়টি নিখোঁজ সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিককে জানায়।

এদিকে সানজিদার বাবা সেই মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তার কাছেও মেয়েকে ফিরে পেতে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। কয়েকবার কথা বলার পর অপহরণকারীরা টাকার অংক কমিয়ে ৫০ হাজার দাবি করে এবং বুধবার রাত ৭টার দিকে দাবি করা গ্রামের একটি কালভার্টের নিচে রেখে আসতে বলে। পাশাপাশি বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্যও হুঁশিয়ার করা হয়। পরে সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক পুরো ঘটনাটি গাবতলী থানায় জানালে পুলিশ নির্ধারিত সময়ের আগেই অপরহণকারীদের নির্ধারণ করে দেওয়া সেই কালভার্টের অদূরে ওঁৎপেতে থাকে।  

এরপর রাত ৭টার দিকে এক ব্যক্তিকে ওই কালভার্টের কাছে আলো দিয়ে কিছু খুঁজতে দেখে পুলিশ ও সানজিদার স্বজনরা সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। পরে তার মুখ দেখে চিনতে পারে সে একই গ্রামের প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে রিয়াদ। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ রাত ১১টার দিকে একই গ্রামে সাজুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে নিহত সানজিদার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ওই রাতেই পাশের কদমতলী গ্রামে নানার বাড়ি থেকে পুলিশ রিয়াদের সহযোগী সাজুর ছেলে শুভকেও আটক করে। সেসঙ্গে সানজিদার মরদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুভ জানিয়েছে তার খালার বিয়ে উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় কেনার টাকার জন্য তারা সানজিদাকে অপহরণ করে। পরে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। আটক রিয়াদ নিজেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দাবি করেছে। আর শুভ বলেছে সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

তিনি বলেন, দুই কিশোর জানিয়েছে তারা ভারতীয় বেসরকারি টিভি চ্যানেলের (সনি আট) ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠান দেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের কৌশল রপ্ত করে।  এ হত্যার ঘটনায় নিহত সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।