ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

ঢাকা: বর্তমানে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ মানসম্পন্ন ও নিরাপদ স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে সবার জন্য পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত স্যানিটেশন সুবিধা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘বিশ্ব শৌচাগার দিবস ২০২১’ (ওয়ার্ল্ড টয়লেট ডে ২০২১) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এ পরামর্শ দেন।  

বৈশ্বিক স্যানিটেশন সংকট মোকাবিলা ও সবার জন্য স্বাস্থ্যকর শৌচাগার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রতিবছরের ১৯ নভেম্বর ‘বিশ্ব শৌচাগার দিবস’ পালন করে আসছে। এবারে ‘বিশ্ব শৌচাগার দিবস ২০২১’-এর প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘শৌচাগারের মূল্যায়ন’ (ভ্যালুয়িং টয়লেটস)।

‘ভূমিজ’ ও ‘ওয়াটারএইড’-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে সহযোগী হিসেবে ছিল ইউনিলিভারের টয়লেট ক্লিনিং ব্র্যান্ড ‘ডোমেক্স’, ‘কিম্বারলি ক্লার্ক’ ও সামাজিক উদ্যোগ ‘ট্রান্সফর্ম’।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ‘এসডিজি ৬.২’ অর্থাৎ সবার জন্য পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান স্যানিটেশন কার্যক্রমের প্রক্রিয়া ও শহরে এটির ব্যবস্থাপনা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

ওয়াটারএইড’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার সড়কপথে প্রতিদিন চলাচল করা ৫০ লাখ মানুষের জন্য পাবলিক টয়লের সংখ্যা মাত্র ৪৯টি এবং সেগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগী। এ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ওয়াটারএইড বাংলাদেশ প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘মেকিং দ্য পাবলিক টয়লেট ওয়ার্ক’ থিমে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তারা এ পর্যন্ত ৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশের একমাত্র সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে ‘ভূমিজ’ পাবলিক টয়লেটগুলো নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে। ব্র্যাকের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে নারীদের জন্য দেশের প্রথম পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিজ যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে  ‘ভূমিজ’র ১৪টি টয়লেটে ৩ হাজার ৫০০ মানুষ স্যানিটেশন সেবা পাচ্ছেন।  

দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের মার্কেটিং ডিরেক্টর মো. শাদমান সাদিকিন বলেন, ইউনিলিভার বিশ্বাস করে উপযুক্ত স্যানিটেশন ব্যবহারের সুযোগ শুধু কিছু মানুষর জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবে গণ্য হতে পারে না বরং এটি সবারই মৌলিক অধিকার। আর তাই ইউনিলিভার তার শীর্ষস্থানীয় টয়লেট ক্লিনার ব্র্যান্ড ‘ডোমেক্স’কে সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬ অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, যাতে সবার জন্য সমানভাবে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর থেকেই ডোমেক্স ‘বিহেভেরিয়াল চেঞ্জ ক্যাম্পেইন (বিসিসি)’-এর মাধ্যমে সবার মধ্যে স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থা যেমন- ভূমিজ, ব্র্যাক ও ওয়াটারএইড’র সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও ইউনিলিভার এবং ডোমেক্স কার্যকরী ও ফলপ্রসূ বিসিসি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনসেচতনতা তৈরিতে এবং উন্নত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে ব্র্যান্ডের বার্তা পৌঁছে দিতে সরকার ও তার অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

‘ভূমিজ’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ফারহানা রশিদ বলেন, এ ব্যবস্থায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাড়তি রাজস্ব আয়ের পলিসি থাকতে হবে, বেসরকারি খাতের সঙ্গে বাড়াতে হবে সম্পৃক্ততা ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক মডেলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ স্যানিটেশন সমস্যা সমাধানে দৃশ্যত পরিবর্তন আনতে পারবে। এছাড়া স্যানিটেশন ব্যবস্থার প্রসারে সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে আরও বেশি অর্থায়নের প্রয়োজন রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থায় ১ ডলার বিনিয়োগ চিকিৎসা খরচে সর্বোচ্চ ৫ ডলারও বাঁচিয়ে দিতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি এ সেবা খাতে চাকরিরও সুযোগ তৈরি হবে।  

‘ভূমিজ’র ইনডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর ও ইউনিলিভারের ডিরেক্টর তানজিন ফেরদৌস বলেন, আমাদের মতো সুবিধাপ্রাপ্ত অল্প কিছু মানুষ তখনই টয়লেটের গুরুত্ব বুঝি যখন আমরা বাসার বাইরে কোথাও যাই এবং আমাদের একটা পরিচ্ছন্ন টয়লেট খুঁজে পাবার চেষ্টা করতে হয়। বাংলাদেশে আমরা যদি আমাদের সক্ষমতার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে চাই তবে সমস্যা সমাধানে সরকার, বেসরকারি খাত, এনজিও, অর্থদাতা সবার যৌথভাবে কাজ করতে হবে। একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করতে হবে, যেমনটি ট্রান্সফর্ম ও ইউনিলিভার শুরু করেছে এবং আমাদের ডোমেক্স ব্র্যান্ডের আউটডোর বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে পাবলিক টয়লেটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও করা সম্ভব হচ্ছে।

ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ওয়াটারএইড দীর্ঘদিন থেকেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পাবলিক টয়লেট স্থাপনে কাজ করে আসছে। আগামীতেও এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ওয়াটারএইড বাংলাদেশ প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘মেকিং দ্য পাবলিক টয়লেট ওয়ার্ক’ থিমে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তারা এ পর্যন্ত ৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, যেসব ভবনে সঠিক নিয়ম মেনে সুয়ারেজ ও বর্জ্য লাইন থাকবে না, সেসব ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া ওয়াটারএইড, ভূমিজ, ইউনিলিভারের উদ্যোগে গণশৌচাগার তৈরির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।  

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নাগরিকদের জন্য গণশৌচাগার নির্মাণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সিটি করপোরেশন নির্মিত গণসৌচাগারগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিএনসিসির অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার তারিক বিন ইউসুফ, ইসডো-এর অ্যাডভাইজর অতুল কুমার মজুমদার, ডিএসকে-এর ডিরেক্টর (ওয়াশ) এম এ হাকিমসহ অন্যান্যরা।  

এছাড়া ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আর্বান ডেভেলপম্যান্ট স্পেশালিস্ট ঈশিতা আলম অবনী, এডিবির প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট পুশকার শ্রীবাস্তব, এডিবির সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার অমিত দত্ত রায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
এসই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।