ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নবান্ন উৎসবে বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
নবান্ন উৎসবে বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

বগুড়া: নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলায় ছোট-বড় সব ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার উথলী বাজারে দুর-দুরান্তের মানুষ আসেন মাছ কিনতে। মেলা উপলেক্ষে এ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বড় বড় মাছ ও নতুন সবজি কিনে স্বজনদের আপ্যায়নের আয়োজন চলছে।

জানা যায়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণের প্রথমেই শিবগঞ্জের উতলী বাজারে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নবান্ন উৎসব পালন করা হলেও এ উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর মাছের মেলা বসে উথলীতে। শত বছরের প্রাচীন উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে উথলী, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবিপুর, গুজিয়া, মেদনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলাসহ ২২ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে ছিল উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের আগে থেকেই নিমন্ত্রণ করা হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা নতুন ধানের চালে নবান্ন করেন।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ মেলায় এক হাজার মণেরও বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ৩৮ কেজি ওজনের পাখি মাছ, ২০ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কার্প, ১১ কেজি ওজনের কাতল, রুই, ব্রিগেড, বাগার, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ বিক্রি হয় এ মেলায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম অনেকটায় বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। মেলায় বিশালাকৃতির রুই-কাতলা ও মাছগুলো ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ২০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ২৪০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে ব্ল্যাক কার্প, বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়।

মেলায় মাছের পাশাপাশি নতুন শাক-সবজির পসরাও সাজানো হয়। মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতিকেজি ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী আরমান আলী, মোমিন মিয়া, এনায়েত উল্লাহ জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে বুধবার (১৭ নভেম্বর) রাত থেকে ২০টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।

তারা বলেন, উথলীর নবান্ন মেলায় বিক্রির জন্য আশপাশের এলাকার পুকুরগুলোতে সৌখিন চাষিরা মাছ মজুদ করে রাখেন। এলাকার কে কত বড় মাছ মেলায় তুলতে পারে যেন তারই প্রতিযোগিতা চলে চাষিদের মধ্যে। এছাড়া আড়ৎদাররা তো আছেই।

তারা আরও বলেন, এলাকার লোকজনও প্রায় প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়। মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব করলেও আশপাশের গ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষই কেনাকাটা করে।

উথলী বাজারের ইজারাদার মাহমুদুল হাসান আপেল বলেন, মেলাটি আগে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সম্প্রতি তা ব্যাপকতা লাভ করেছে। শুধু আশপাশেরই নয় পুরো শিবগঞ্জ উপজেলার মানুষ এখানে নবান্নের বাজার করতে আসেন। মাছের মেলার খবর পেয়ে শহর থেকেও অনেকে আসেন মাছ কিনতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
কেইউএ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।