ঢাকা: মওলানা ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ‘মওলানা ভাসানীর কৃষক সমিতি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এতে আলোচনা করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, দি ডেইলি নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর এবং গ্রন্থটির সম্পাদক ও মওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত সচিব সৈয়দ ইরফানুল বারী প্রমুখ।
আলোচনা সভায় সংহতি প্রকাশনের সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ফিরোজ আহমেদ সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম এই নেতাকে নিয়ে ইতোপূর্বেও সংহতি আরও ৩টি বই (মওলানা ভাসানীর লেখা ‘মাও সেতুঙ এর দেশে’, মওলানা ভাসানীকে নিয়ে লেখা ‘রেডরেড মওলানা’, ‘ডিপোজিং অব এ ডিক্টেটর’) প্রকাশ করেছে।
বইটির সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী ভাসানীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি মেহনতি মানুষের সঙ্গে মধ্যবিত্ত ছাত্রদের যে নিবেদন এবং কীভাবে তারা কর্মী হয়ে ওইসময়ে রাজনীতিতে অবদান রাখতে পেরেছিলেন সেগুলো বর্ণনা করেন।
নূরুল কবীর বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ধারণা আলাদা, ভাসানীর তাৎপর্য হলো তিনি দুটো সংগ্রামই নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ইতিহাসের ওপর জবরদস্তি চলছে। সরকারি ভাষ্যের বাইরে ইতিহাসবিদ, গবেষক, পোষ্য লেখকরা লিখতে সাহস করেন না। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং গণমানুষের সংগ্রামে ভাসানীর অবদানকে ওরা আড়াল করে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি ধাপের ইতিহাসে ভাসানী অবিচ্ছেদ্য। তিনি গণরাজনীতিতে অনেক কর্মযজ্ঞ এবং ভাষা তৈরি করেছেন। ঘেরাও, বয়কট আন্দোলন, নতুন স্লোগান, নির্বাচন বয়কট ইত্যাদি। নতুন স্লোগান যেমন, ‘কেউ খাবে তো কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না’। আরেকটা বিপ্লবী স্লোগান ছিল ‘শ্রমিক কৃষক অস্ত্র ধরো, পূর্ব-বাংলা স্বাধীন করো’।
তিনি বলেন, মওলানা মানুষের বুকের ভাষা বুঝতেন, চোখের আগুন পড়তে পারতেন। সেজন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বড় বড় আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানগুলো তার নেতৃত্বেই হয়েছে। মওলানার আজন্ম-বিপ্লবীর চরিত্রটাকে এখন আমাদের চিনতে হবে।
সভাপতির ভাষণে জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের মূলধারা নামে যা বিকৃত করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা একদিন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। গদিরক্ষা করাই যখন সরকারের প্রধান কাজ হয়ে ওঠে ও তারই পরিপ্রেক্ষিতে রচিত ইতিহাস চাপানো হয়, তখনই দেশ ভয়াবহ বিপদে পড়ে।
সাকি আরও বলেন, শেখ মুজিব কার্যত মওলানা ভাসানীর চিন্তার রাজনীতিই বাংলাদেশে করে গেছেন।
তিনি বলেন, এই দেশকে টেকাতে হলে সংবিধানের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন এবং এই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১
এমআরএ