বরিশাল: বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার রাজেশ কুমার রায়না বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নায়ক এবং জাতির পিতাই নন, তিনি ভারতেরও নায়ক। কারন ১৯৭১ সালে আমি দেখেছি ভারতে প্রচুর মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় দিয়ে সমর্থন করেন, ভালোবাসেন।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজেশ কুমার রায়না বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন সময় সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তার সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে অর্থনীতি, সমাজ ও জীবন ব্যবস্থার। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মনের অমিল কখনোই ঘটেনি। তারা মিলেমিশে আছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে ভারতের অনেক রাজ্যের সংস্কৃতির মিল আছে। এদের মাঝে কে বাংলাদেশি কে ভারতীয় বিভক্ত করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ভুখণ্ড, ধর্ম এসবে অমিল থাকলেও সংস্কৃতিতে অমিল নেই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। ভাষার জন্য বাঙালিরা ছাড়া কোন জাতি পৃথিবীতে যুদ্ধ করেনি। ভাষা এবং সংস্কৃতি একটি জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলোই আমদের অতীত তুলে ধরে।
হাই কমিশনার বলেন, আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি শিশু তার সংস্কৃতি ধারণ করে বেড়ে ওঠে। আর এ সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে একটি দেশ তাদের ফুটিয়ে তোলে। আমি যদি বাংলার দিকে তাকাই আমি দেখি সুন্দরভাবে তারা দুর্গাপূজা উদযাপন করছে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা আনন্দের সঙ্গে সহাবস্থানে থেকে যার যার ধর্ম পালন করছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে রাজেশ কুমার রায়না বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় একটি কথা বলেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে বাংলাদেশ সবার দেশ। আর সেটাই আমরা সবাই অনুসরণ করছি। যখন আমরা একে অপরকে ধর্মীয় উৎসব পালনে সহায়তা করবো তখনই এটা একটি মহা উৎসবে পরিণত হবে। এর মাধ্যমেই মনবতা প্রকাশ পাবে; প্রকাশ পাবে মানুষের জন্য মানুষ। এভাবে না হলে স্বর্থানেষী মহল সব সময় আমাদের মধ্যে এসে সুবিধা গ্রহণ করবে। কারণ পৃথিবীতে স্বার্থবাদি মানুষ সব সময় সুযোগ খুঁজে বেড়ায়।
তিনি বাংলাদেশের অতিথীপরায়নতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, অতিথিপরায়ণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যন্য সব দেশের চেয়ে সেরা। আমার কূটনৈতিক চাকরির জীবনে আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি। এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে, তারা বাংলাদেশের মতো অতিথিপরায়ণ নয়।
রায়না বলেন, এখানে অনেক দেশের চেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। কিন্তু সবাই সুখে আছেন। কারণ সংস্কৃতি তাদের সুখে রেখেছে। এখানে একসাথে সবাই সবার উৎসব উদযাপন করে। আমরা যখন দেখি সবাই খুশি তখনই আমরা কেবল নিজেদের সুখি মনে করি। রাজনীতি পরিবর্তনের ফলে আমাদের অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটেছে, সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়নি বলে আমরা এখনও সুখি।
সহকারী হাই কমিশনার সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য কামনা করে বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। যদি আমি আমার নিজের মুখ আয়নাতে দেখতে না পারি তবে আমি কোনদিন নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবো না। তিনি রিপোটার্স ইউনিটির সকল সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। সহকারি হাই কমিশনারের সাথে ছিলেন তার স্ত্রী নন্দিতা রায়না।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি নজরুল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিক সৌরভ, সিনিয়র সাংবাদিক আনিসুর রহমান স্বপন, সুশান্ত ঘোষ, বাপ্পী মজুমদার, কামাল মাসুদুর রহমান, রবিউল ইসলাম, তন্ময় তপু, রাসেল হোসেন, এন আমিন রাসেল প্রমূখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২১
এমএস/এনএইচআর