কেরানীগঞ্জ: ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেম্বার নির্বাচিত হয়ে মাত্র ১০ বছরে বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে রাসেল মিয়ার।
কেরানীগঞ্জের কুণ্ডা ইউপির ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রাসেল।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাসেল মিয়া এখন চলেন বিলাসবহুল গাড়িতে। তার আছে চোখ ধাঁধানো বাগানবাড়ি, যেখানে নিয়মিত বসান মদ ও জুয়ার আসর।
১৮টি ব্যাংক হিসাবে অন্তত ১০ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্যও মিলেছে। মালিক হয়েছেন ছয়টি ইটভাটা ও দুটি ডকইয়ার্ডের।
দুুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এসব তথ্য উত্থাপন করা হয়েছে।
১৩ ও ৩১ অক্টোবর দুদকে রাসেলের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগের চিঠি জমা দিয়েছেন মোকাররম হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
সেখানে রাসেলের দুর্নীতি, জবরদখল ও অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকার সম্পদ অর্জনের বিবরণ তুলে ধরে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেম্বার রাসেল মিয়া বলেন, একটি মহল আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দুদকে দেওয়া অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অভিযোগে বলা হয়, রাসেল মিয়া ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কিন্তু ২০১১ সালে এলাকার ইউপি সদস্য হওয়ার পর ভূমি জবরদখল ও জাল-জালিয়াতির কারবার শুরু করেন। আর এর মাধ্যমে বনে যান শতকোটি টাকার মালিক। সাধারণ মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, অন্যের জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে বিক্রি করা তার পেশা। আয়ের বৈধ তেমন কোনো উৎস না থাকলেও গত ১১ বছরে রাসেল বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তার ভাই হাবিবুর রহমান রানা ও মোস্তাক আহম্মদ রাজুকে সঙ্গে নিয়ে ভাই ভাই ব্রিকস নামে নিজ এলাকায় ৬টি ইটভাটা দিয়েছেন।
আরও আছে ভাই ভাই ডকইয়ার্ড ও রাসেল ট্রেডার্স নামে দুটি ডকইয়ার্ড। এর বাইরে প্রায় ৫০টি দলিলে অন্তত ১ হাজার শতাংশ জমি নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এসব জমির রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ খরচ করেছেন অন্তত ১০ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের ধর্মগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮টি হিসাবে বাবা, ভাই ও রাসেলের নিজ নামে গচ্ছিত রয়েছে ১০ কোটি টাকা।
বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করেছেন মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে। সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ার খবরও চাউর রয়েছে এলাকাবাসীর মুখে।
রাসেলের আয়কর বিবরণীতে সম্পদ ও আয়ের তথ্য গোপন করা হয়েছে উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, জমি কেনার মৌজার সরকারি মূল্য হিসাবে রাসেলের নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়া জমির দাম প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পদসহ রাসেল শত কোটি টাকার মালিক হলেও সর্বশেষ জমা দেওয়া আয়কর রিটার্নে ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) খোঁজ নিলে জানা যায়, ২০২০-২১ করবর্ষে রাসেল মিয়া কর অঞ্চল-৪- এর ৮৪ নম্বর সার্কেলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন।
২১০৯৬২৩৪২৫৭৮ টিআইএন নম্বরে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে তিনি ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয় দেখিয়ে কর দিয়েছেন ২৪ হাজার টাকা। নিট সম্পদ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার। তার নামে অভিযোগ রয়েছে, সনাতনদের জায়গা-জমি ফাঁকা দেখলেই কৌশলে নিজে মালিক সেজে দখল করে নেন রাসেল।
এছাড়া জমি নিয়ে জটিলতা নিরসনে মেম্বার হিসেবে হিন্দুরা তার কাছে সালিশ নিয়ে গেলে নিজেই কৌশলে ঢুকে পড়ে জমির মালিক বনে যান।
স্থানীয় ভূমি রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে থাকা তার নিজস্ব লোকের মাধ্যমে এসব জালিয়াতি করেন।
স্থানীয় ব্রাহ্মণগাঁওয়ে হিন্দুদের রথখোলার মঠ ভেঙে প্লট তৈরি করেন রাসেল। প্লটে যাতায়াতের জন্য রথখোলার মাঝখানে রাস্তাও বানান তিনি। ব্রাহ্মণগাঁওয়ে তিন বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়ি বানিয়েছেন রাসেল। সেখানে নিয়মিত মদ-জুয়ার আসর বসান।
কুণ্ডা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহিউদ্দিন জানান, রাসেল রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনার আসামিও ছিলেন। ইউপি মেম্বার হওয়ার আগে একটি ইটভাটার ২৫ শতাংশ শেয়ার ছিল তার পরিবারের। অন্য কোনো ব্যবসা থাকার তথ্য জানা নেই। ইউপি সদস্য হওয়ার পর এখন প্রায় শত কোটি টাকার মালিক তার পরিবার।
একই এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি করে রাসেল এসব টাকার মালিক হয়েছেন। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগে রাসেলের নামে ২৪ অক্টোবর মনির হোসেন নামে একজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
এএটি