ঢাকা: অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীদের অচেতন করতে ব্যবহৃত হয় অক্সি-মরফোন ট্যাবলেট। এছাড়া ক্যান্সার, হৃদপিণ্ডের অসুখ, ফুসফুসের ইডিমা বা শোথসহ দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রীদের অসহনীয় ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয় এটি।
অক্সি-মরফোন বিক্রির জন্য লাইসেন্স বা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি বর্তমানে ব্যথানাশক এই ট্যাবলেটটি মাদক হিসেবে ব্যবহার করছেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কফের সিরাপ বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে ট্যাবলেটটি সেবন করছে, যা সমাজের জন্য বিপত্তি ডেকে আনছে। অন্যদিকে এই সুযোগে অধিক লাভের আশায় খোলাবাজারে অবৈধভাবে অক্সি-মরফোন ট্যাবলেট বিক্রি করে আসছে একটি চক্র।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর বাবু বাজার মাজারের সামনে থেকে অসাধু চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম। গ্রেফতাররা হলেন- মো. আলমগীর সরকার ও জাহিদুল ইসলাম। অভিযানে কোতয়ালী থানাধীন মিটফোর্ড এবং ধানমণ্ডি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ১৩ হাজার পিস অক্সি-মরফোন ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।
শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ডিবি জানায়, অক্সি-মরফোন হলো মরফিনের একটি অ্যানালগ ভার্সন, যা এনালজেসিক ড্রাগ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ইনজেকশন থেকে ওরাল ফর্মে নিয়ে আসা হয়েছে। এটি মূলত কাজ করে সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমে।
মরফোন একটি ইউফোরিক ড্রাগ। যা মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আনন্দ অনুভূতি তৈরি করে। শরীরের সাময়িক দুঃখ-কষ্ট, ব্যাথা ভুলিয়ে দেয়। ফলে ব্যথার অনুভূতি মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে না। বোধ অসাড় হয়ে যায়। যুব সমাজ বিশেষ করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে এর ব্যাপক ব্যবহার গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সি-মরফোন বিক্রয় ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়। যা নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে লাইসেন্স দেখিয়ে, কোন পথে যাবে, কার কাছে যাবে- এসব জানানোর পর বিক্রি করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এডি) মেহেদী হাসান বলেন, এটি তালিকাভুক্ত মাদক। সাধারণ ওষুধের মতো অক্সি-মরফোন বিক্রির সুযোগ নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাদকসেবীদের কাছে অবৈধভাবে এই মাদক বিক্রি করছেন।
ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত কোম্পানি থেকে এই ট্যাবলেটগুলো অবৈধভাবে আসামিদের হাতে গিয়েছে। ১৩ হাজার ট্যাবলেটের বড় একটা অংশ কুরিয়ারের মাধ্যমে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছে। যিনি এসব ট্যাবলেট পাঠিয়েছেন, তিনি আগের মামলায় পলাতক আসামি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
অক্সি-মরফোনের আবির্ভাব:
১৮০৫ সালে জার্মান ফার্মাসিস্ট ফ্রিডরিখ সার্টারনার আফিম থেকে মরফিন পৃথক করেন। তিনি এর নামকরণ করেন গ্রিক স্বপ্ন দেবতা মরফিয়াসের নাম অনুসারে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এটা প্রাথমিকভাবে ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে মরফিনের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন যুদ্ধাহত মার্কিন সৈনিকদের ব্যথা কমাতে ও শল্যচিকিৎসায় চেতনানাশক হিসেবে মরফিন ব্যবহৃত হতো। বারবার ব্যবহারের ফলে পরবর্তীকালে সৈনিকদের মধ্যে মরফিনের প্রতি আসক্তি তৈরি হয় যা ‘সোলজার ডিজিস’ নামে পরিচিত।
আসক্তি:
মরফিন প্রচণ্ড আসক্তি সৃষ্টি করে। এটা মানসিক ও শারীরিক উভয় ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি করে। মরফিনে আসক্তরা মারাত্মক রকমের অবসাদগ্রস্ততা, বিষন্নতা, নিদ্রাহীনতা, স্মৃতিবিচ্যুতি ও মতিভ্রমে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটা সিডিউল-১ ওষুধ এবং এটার বিক্রি, বিপণন, ব্যবহার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীনে করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
এসজেএ/এনএসআর