ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতের স্নিগ্ধতায় লাগবে নাকি নরম তুলার ওম?

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
শীতের স্নিগ্ধতায় লাগবে নাকি নরম তুলার ওম? লেপ সেলাই করছেন কারিগর। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: প্রকৃতি থেকে যায় যায় বলছে ঋতুরানি হেমন্ত। আর তাই শেষ বেলায় মায়াবী হয়ে উঠেছে উষ্ণ প্রকৃতি।

নরম হয়ে এসেছে সূর্যের আলোক রেখা। উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাস হিমেল আবেশ ছড়াচ্ছে ক্লান্ত শরীরে। রোদের উত্তাপ যেন আর গায়ে লাগছে না।

দিন যত গড়াচ্ছে তাপমাত্রার পারদ ততই নিচে নামছে। সুনিপুণ হাতে সেলানো নকশি কাঁথা শরীরে উঠতে শুরু করেছে রাতে। এখনই ঘন কুয়াশায় উনুনের ধোঁয়ার মতো দেখাচ্ছে ভোরের স্নিগ্ধ আলো। সকালে মিষ্টি রোদ হাসলেই কেবল আড়মোড়া ভাঙছে দীর্ঘ রজনীর। যার আঁচ পড়েছে ধুনকর পাড়ায়ও। ধানের ডগায় শিশিরের পরশ দিয়ে প্রকৃতি থেকে বিদায় নিচ্ছে হেমন্ত। তার আগেই ধুনকর পাড়ায় ছড়িয়েছে শীতের আবেশ। যেন হামাগুড়ি দিয়ে আসছে শীত; প্রস্তুতির পালা এখনই।

রোদের উত্তাপ না থাকায় বিকেলেই নামছে সন্ধ্যা। আর সন্ধ্যা হলেই গায়ে উঠছে হালকা গরম কাপড়। রাতের নিহরে পথের পাশে থাকা সবুজ জংলি গাছপালা, ঝোপঝাড় ও মাঠের দূর্বাঘাসগুলো ভিজে উঠছে। সকাল পাড়া-মহল্লায় হাঁকডাক শুরু হচ্ছে ধুনকরের। বাড়ির আঙ্গিনা বা ছাদে লেপতোশক বানানোর ধুম পড়ে গেছে। শহর কিংবা গ্রাম কোনো ফারাক নেই। শীতের আগমনী বারতায় প্রকৃতির মতো শীতের প্রস্তুতি চলছে এই তিলোত্তমা নগরেও। শীতকে বরণ করে নেওয়ার জন্য চারিদিকে যেমন ব্যস্ততা বেড়েছে। তেমনি কেমন শীত পড়বে তা নিয়েও শুরু হয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজশাহী অঞ্চলে দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকছে। আর দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। সাধারণত ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নেমে আসলেই হালকা শীত অনুভূত হয়, এমনটাই বলছে আবহাওয়া অফিস।

তবে,ঋতু পরিক্রমায় হাড় কাঁপানো শীত নামতে এখনও প্রায় এক মাস বাকি। কিন্তু রাজশাহীতে এখনই শীতের আমেজ মেলায় পরিবারের লোকজনের জন্য বাক্সবন্দি করে রাখা লেপ-কাঁথা ও কম্বলসহ শীতবস্ত্র বের করছেন গৃহবধূরা।

অনেকে পুরনো লেপ ঠিক করার জন্য বের করছেন। আবার অনেকে নতুন করে লেপ তৈরি করতে দিচ্ছেন। আর মানুষের শরীরের কাপড়ে পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর ধুনকর পাড়ার কারিগররাও। মহানগরের বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ঘুরে ঘুরে ধুনকররা তৈরি করেছেন লেপতোশক।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটি বাড়িতে লেপ বা তোশক তৈরি করছেন। চলে যাওয়ার সময় আবার অর্ডার নিচ্ছেন পরের দিনের জন্যও। গদির ওপরে ধুনকরের বেতের বাড়ির আওয়াজ আর বাতাসে উড়ে বেড়ানো নরম শুভ্র তুলো জানিয়ে দিচ্ছে যে দুয়ারে শীত। রাজশাহী মহানগরীর তুলাপট্টি নামে খ্যাত গণকপাড়ার লেপতোশক তৈরির দোকানগুলোতেও এখন আশপাশের জেলার থেকে আসা কারিগররা কাজ করছেন। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মত স্থায়ী দোকানগুলোতেও শীতের কাজ চলছে পুরোদমে। এখন তাদের ব্যস্ততার অন্ত নেই। সেখানে বর্তমানে পুরনো লেপের তুলো ধুনে এবং কাপড় পাল্টিয়ে নতুনভাবে তৈরির অর্ডারই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সেসঙ্গে গার্মেন্টসের তুলা দিয়ে তৈরি করা লেপতোশকও বিক্রি হচ্ছে। যার বিক্রি মূল্য সিঙ্গেল ১ হাজার টাকা। আর ডাবল লেপ ১ হাজার ৮শ টাকা। এছাড়া ভালো শিমুল তুলা দিয়ে নতুনভাবে একটি সিঙ্গেল লেপ তৈরি করতে এখন খরচ পড়ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। আর ডাবল লেপ তৈরিতে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সিঙ্গেল তোশক ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ডাবল ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তৈরি করা যাচ্ছে সেখানে।

মহানগরীর গণকপাড়া এলাকার পুরনো ধুনকর মনু মিয়া। কেমন কাজ চলছে প্রশ্নে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পুরোদমে শীতের শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহেই সবচেয়ে বেশি অর্ডার পরছে। প্রতিটি দোকানেই ব্যবসা জমে উঠেছে। একেক জন কারিগর সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাতটি পর্যন্ত লেপতোশক তৈরি করছেন।

সাধারণত একটি লেপ তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগে এক থেকে দুই ঘণ্টা। এভাবে একজন কারিগর দিনে গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি লেপ তৈরি করতে পারছেন। দিনে এই সংখ্যার তোশক তৈরি করতেও প্রায় একই সময় লাগছে। তবে তুলা ও কাপড়ের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার লেপতোশকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি লাগছে। এছাড়া কারিগরদের মজুরিও বেড়েছে। সবমিলিয়ে লেপতোশক তৈরিতে কয়েক দিন থেকে ব্যস্ততা বেড়েছে বলেও জানান মনু মিয়া।

এই এক সপ্তাহ আগেও দোকানে কাজের কোনো চাপ ছিল না বলে জানান ধুনকর পাড়ার জাব্বার আলী। তিনি বলেন, মাত্র কয়েক দিন থেকেই হালকা শীত পড়েছে রাজশাহীতে। খুব ভোরে কুয়াশা থাকছে। সন্ধ্যার পর বাইরে বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। টানা গরম শেষে আবারও শীতের আমেজ বিরাজ করছে। এতে চলতি সপ্তাহে লেপ তৈরির অর্ডার দেওয়া-নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।

জাব্বার আলী উল্লেখ করে বলেন, দোকানের আসার পর আজই দুপুর পর্যন্ত ১৫টি লেপ তৈরির অর্ডার পেয়েছেন। কাউকে পরেরদিন কাউকে দুদিন কাউকে তিনদিন এভাবে কাউকে ১০ দিন পরও লেপতোশক ডেলিভারি করবেন বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। তবে পুরোদমে শীত পড়লে লেপতোশক তৈরির পরিমাণ আরও বাড়বে।

কারণ বাড়ির লেপতোশক ও বালিশ তৈরির জন্য সাধারণত শীতকালকেই সবাই বেছে নেন। এজন্য শীতকালে ধুনকর পাড়ার ব্যস্ততা দ্বিগুণ বেড়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন এই ধুনকর।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।