ঢাকা: করোনাকালে বাংলাদেশকে ভ্রমণের রেড অ্যালার্ট তালিকায় রাখা ও মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে ঢাকা-লন্ডন সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। তবে ভ্রমণে রেড অ্যালার্ট থেকে বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহার ও যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদের বাংলাদেশ সফরের মধ্যে দিয়ে উভয় পক্ষের সম্পর্কে নতুন গতি পেয়েছে।
রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহারে সন্তোষ: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের প্রবেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে দফায় দফায় দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ আলোচনা চলেছে। তবে কোনোভাবেই রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহার হচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সরব ছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন এটা যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ইস্যুও হতে পারে। করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত কম থাকার পরও রেড অ্যালার্ট দেওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারের সমালোচনা করে আসছিলেন তিনি। তবে পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশিদের রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহার করে নিলে মেলে স্বস্তি।
মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে টানাপোড়েন: যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) ২০২০ সালের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক প্রতিবেদন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলে আসছিল। ওই প্রতিবেদনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী উল্লেখ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ঢাকার যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার জাবেদ প্যাটেলকে তলবও করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে প্রত্যাশা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগদানকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন তারা ৷ বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীরের প্রত্যাশা করেন যুক্তরাজ্যের শীর্ষ নেতারা।
ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর ঢাকা সফর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরের পরেই ঢাকায় আসেন যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে যোগ দিতে এলেও তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়া রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার জন্য কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাশে থাকার অঙ্গীকার: রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্য পাশে থাকার জন্য জোরালো অঙ্গীকার করেছে। প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদের ঢাকা সফরকালে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকার জোরালো অঙ্গীকার করেছে।
৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা: প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের মেয়েদের শিক্ষা উন্নয়নে আরও ৫৪ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। দুই দেশের সম্পর্ক আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী-সচিবের প্রত্যাশা: ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন৷ বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। মাসুদ বিন মোমেন যুক্তরাজ্য রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহার করায় লর্ড আহমেদের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
টিআর/এমএমজেড