ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হেরে গেলেন আইনি লড়াইয়ে

যুক্তরাজ্যে সাঈদীর পর আজহারীও নিষিদ্ধ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
যুক্তরাজ্যে সাঈদীর পর আজহারীও নিষিদ্ধ

অবশেষে আইনি লড়াইয়েও হেরে গেলেন বাংলাদেশের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।  

চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর লন্ডনের হাইকোর্টে কুইন বেঞ্চ ডিভিশনে মিজানুর রহমান আজহারীর ব্রিটেনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে করা মামলার জুডিসিয়াল রিভিউর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

 

বিচারক জাস্টিন থ্রোনটন শুনানি শেষে আজহারীর ভিসা বাতিলের পক্ষে রায় দেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, বিচারক জাস্টিন থ্রোনটন সাবেক লেবার পার্টির নেতা অ্যাড মিলিব্যান্ডের স্ত্রী।

বিভিন্ন সূত্র মতে, অথরিটি টু কারি স্কিম ট২১ এর ১৪ই, অনুযায়ী আজহারীর করা আবেদনটি খারিজ করে দেওয়া হয়। আজহারীর যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ভিসা বাতিল নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অক্টোবর থেকেই আলোচিত বিষয় ছিল। সর্বশেষ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি বব ব্ল্যাকম্যান আজহারীর যুক্তরাজ্য সফরের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বক্তব্য রাখায় আরও বেশি গুরুত্ব পায়।

সংসদে দেওয়া তার বক্তব্যে এমপি বব বলেন, আজহারীর বক্তব্যে ব্রিটেনের মুসলিম কমিউনিটি বৃহৎ অংশ বিভ্রান্ত হতে পারে, সমাজে ঘৃণা ছড়াতে পারে, তাই তাকে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে না দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। পার্লামেন্টে তার নির্ধারিত বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশের ঘৃণা ছড়ানো ইসলামিক বক্তা মাওলানা আজহারীকে লন্ডনে রয়েল রিজেন্সি হলে ইসলামী কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনি যুক্তরাজ্যে আসার জন্য কাতারে এসে আটকে আছে। এ ধরনের ঘৃণা ছড়ানো ব্যক্তি যে হিন্দু ও ইহুদি ধর্মের প্রতি ঘৃণা ছড়ায় তাকে ব্রিটেনে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হবে না। মিজানুর রহমান আজহারী ব্রিটেনে ঢুকলে তার বক্তব্যের মাধ্যমে এখানকার শান্তিপ্রিয় বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী ভুল তথ্য পেয়ে বিভ্রান্ত হতে পারে। এমনকি তিনি অনলাইনেও এই ধরনের ঘৃণা ছড়াতে পারে।

ব্ল্যাক ম্যান এমপি সংসদে মিজানুর রহমানের ভিসা বাতিল বহালের আলোচনার জন্য হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

ব্ল্যাক ম্যান এমপির এই বক্তব্যের পর সংসদ লিডার স্যার জ্যাকব রিস বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, এদেশে ঘৃণা ছড়ানো একটি মারাত্মক অপরাধ। ঘৃণা ছড়ায় এমন কাউকে আমরা এদেশে প্রবেশ করতে দিতে পারি না। ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে আমাদের একটি অবস্থান রয়েছে সেটার ভিত্তিতে হোম সেক্রেটারির কাছে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

অন্যদিকে আজহারীকে ব্রিটেনে নিয়ে আসতে আয়োজক, আতাউল্লাহ ফারুক একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলন। আজহারী নিজে ও তার ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি বক্তব্য প্রচার করে পিটিশনে তার পক্ষে সই দেওয়ার অনুরোধ জানান, সর্বশেষ সেখানে প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ সই করেন। তবে, এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হয়নি আজহারীর।  

৩১ অক্টোবর একটি ইসলামী কনফারেন্সে যোগ দিতে মালয়েশিয়া থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মিজানুর রহমান আজহারী। কিন্তু লন্ডনে আসার পথে কাতারে ট্রানজিটে আটকা পড়েন তিনি। কাতারের ইমিগ্রেশন থেকে আজহারীকে লন্ডনের বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি। দুই দিন দেন দরবারের পরে ব্রিটিশ সরকার তার ভিসা বাতিল করে দেয়। বাতিল করা ভিসা বহালের জন্য লন্ডনে আজহারীর পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন আয়োজকরা। যদিও ব্রিটেনে যে অনুষ্ঠানে আজহারী উপস্থিত থাকার কথা সেই অনুষ্ঠান আয়োজক আইওন টিভি অনুষ্ঠানটি স্থগিত ঘোষণা করেছে।

এ ব্যাপারে হোম অফিসের মিডিয়া অ্যান্ড প্রেস অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

আজহারীর বিষয়টি নিয়ে তাদের কাছে আরও অনেকেই জানতে চেয়েছে। কিন্তু বাধ্যবাধকতা থাকায় তার কোনো তথ্য দেয়নি। আমন্ত্রণকারীদের পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের স্বচ্ছ ধারণা না দেওয়াতে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা চলছিল।

লন্ডনের আয়োজকরা আইনিভাবে আজহারীর যুক্তরাজ্য সফর নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন এবং জরুরি জুডিসিয়াল রিভিউর আবেদন করেছিলেন এবং ভার্চ্যুয়াল আদালতে তার শুনানি হয়। বিচারক ব্রিটেন প্রবেশে আজহারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি বহাল রাখেন। ভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় আজহারীকে। ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আইওন টিভির সিইও আতাউল্লাহ ফারুক কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।  

তিনি বলেন, যেহেতু আইনি বিষয়, আমার আইনজীবীদেরও নিষেধ আছে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে।  

৩১ অক্টোবর রোববার থেকে লন্ডনসহ ব্রিটেনের ৬টি শহরে ইসলামী বক্তব্যের আয়োজন করা হয় ব্রিটেনের আইওন টিভির পক্ষ থেকে।

এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে সারা ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে ১৫ পাউন্ড থেকে ১০০ পাউণ্ডের মূল্যের ১২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল।

আজহারীর যুক্তরাজ্যে সফরের খবর প্রকাশের পর থেকেই কমিউনিটিতে মিশ্র-প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকেই আয়োজক আইওন টিভির ব্যানারে আজহারীর আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন আবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি থেকে শুরু করে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অনেক মানুষ আজহারীর সফরের বিরোধিতা করে আসছিলেন। অনেকেই ব্রিটিশ এমপি থেকে শুরু করে হোম অফিসসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট জায়গায় আজহারীর বিভিন্ন বক্তব্য যেখানে অন্য ধর্মকে আঘাত করা হয়েছে, যেসব বক্তব্য ঘৃণা ছড়ায় এমন সব ভিডিও পাঠানো হয়েছে। এমনকি আজহারীর ওপর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)– এর কে অবমাননা করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগও আছে।

এর আগে ২০০৬ সালে, যুক্তরাজ্যে তৎকালীন ৪ দলীয় জোটের সরকারের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকেও যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির প্রশাসন।

যুক্তরাজ্যে ঢুকতে পারলেন না আজহারী

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।