চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের জোহরপুর গ্রামের পাগলা নদী তীরের মাটি দেবে গিয়ে ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো।
১৪ নভেম্বর (রোববার) পাগলা নদীতে ধসে যায় ৫০টি বাড়ি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এক সপ্তাহ ধরে কারো ভাগ্যে এখনো জোটেনি কোনো সহায়তা।
সুন্দরী রানী স্বামীকে নিয়ে অনেক কষ্টে ২২ লাখ টাকা খরচ করে একটি সুন্দর বাড়ি বানিয়ে সুখের সংসার বেঁধেছিলেন। স্বামী স্বর্ণকারের কাজ করে তার অর্জিত আয়ে ২ সন্তান নিয়ে ফ্লাট বাড়িতে সুখেই ছিলেন। এনজিওতে সামান্য লোন থাকলেও তা শোধ হবার পথে। কিন্তু হঠাৎ তার সুখের সংসারটি ভেঙে যায় গত ১৪ নভেম্বর রোববার। আহত হয় ৩ বছরের শিশু সন্তানটিও। সব হারিয়ে এখন তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের মন্দিরে। শুধু সুন্দরী নয়, এ অবস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার জোহরপুর মহল্লার পাগলা নদী তীরবর্তী গ্রামের সুন্দরী রাণীর মত ৫০টি পরিবারের।
সরেজমিনে মোবারকপুর ইউনিয়নের জোহরপুর গ্রামে দেখা গেছে, এখনও নদীর তীরবর্তী মাটি দেবে যাওয়ায় গ্রামটিতে নদী সংলগ্ন এলাকায় ফাটল অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যেই ১১টি বাড়ি পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিলিয়ে গেছে এবং ৩৯টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ফাটল অব্যাহত থাকায় আরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আর এর কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি বলে মনে করে গ্রামবাসী।
ডাবলু, দয়াল হালদার, নজরুল, জাহাদুর ও রশিদসহ অনেকে জানান, তাদের কেউ কেউ এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে। আবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্তরা অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার জায়গা না থাকায় রাতে জেগে বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩০ বছর আগে একটি একটি করে গড়ে ওঠে এই গ্রামটি। পাগলা নদীর পাশে হওয়ায় অনেকের বাড়ির কিছু অংশ নদীর জমির তীরেও লক্ষ্য করা গেছে।
রূপচাঁন হালদার বলেন, গত বুধবার সকালে বাড়ির উঠানে একটি ফাটলের দাগ দেখতে পাই কিন্তু গুরুত্ব দেইনি। পরের মঙ্গলবার সকালে দেখি আমার একটি ঘরসহ টয়লেট ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। আমি একজন জেলে সারাজীবনের জমানো টাকায় এই বাড়ি বানিয়েছিলাম। এখন আমি কই থাকব। এ ঘর ভেঙে যাওয়ায় এখন আমি কই থাকব, কি খাব বুঝতে পারছি না।
তপন হালদার বলেন, আমাদের বাড়ির পিছনেই পাগলা নদী আর পাশেই রয়েছে কানসাট স্লুইচ গেট। সম্প্রতি পাগলা নদী খনন করায় এবং এতদিন ধরে বন্ধ স্লুইচ গেট খুলে দেওয়ায় উজান অংশের পানি দ্রুত নেমে গিয়ে মাটি দেবে থাকতে পারে। আর এ কারণেই মাটির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ঘরবাড়ি ধসে যাচ্ছে বলে মনে হয়।
অলকারাণী বলেন, হামরা গরিব মানুষ কারো স্বামী মাছ মারে করো স্বামী বাদাম বিক্রি করে খাই। কেউবা ঋণ নিয়ে তো কেউবা সারা জীবনের জামানো টাকায় ছোট করে গড়ে তুলেছিলাম এই স্বপ্নের বাড়ি। কিন্তু সেই স্বাদ আর পূরণ হলো না। স্বামী সন্তান নিয়ে আর থাকা হলো না। ঘরবাড়ি হারিয়ে আমরা ৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছি পাশের কালি মন্দিরে।
মোবারকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে পরিবারগুলো পথে বসতে যাচ্ছে। স্লুইচ গেটটি এভাবে না খুললে মাটি দেবে যেত না।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি পরিবার চাইলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িতে যেতে পারবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, মূলত নদী তীরের অধিক উচ্চতায় যথাযথ নিয়ম মেনে বাড়ি নির্মাণ না করা ও মাটির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এবং ঘটনাস্থলের পাশের সোনামসজিদ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের ভারী যান চলাচলের জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান সুজনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
আরএ