ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রাইভেটকারটি কিশোর চালকের পরিবারের নয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
প্রাইভেটকারটি কিশোর চালকের পরিবারের নয় দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেটকার

ঢাকা: রাজধানীর বেইলি রোডে বেপরোয়া গতিতে রিকশা দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া ওই প্রাইভেটকারটি কিশোর চালক বা তার পরিবারের নয়। এমনকি দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালালেও তার নিজের কোনো লাইসেন্স ছিল না।

পুলিশ বলছে, গাড়ি চালিয়ে রিকশাচালক, আরোহী বাবা ও তার পাঁচ মাসের শিশুকে আহত করা প্রাইভেটকারটি জব্দ করেছে পুলিশ। ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত তাসকিন আহমেদ বা তার পরিবার এই গাড়িটির মালিক নয়। গাড়িটির মালিক ওয়ারি থানার কামাল নামে এক ব্যক্তির।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফখরুল হাসান তার পাঁচ মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে বের হন। তিনি একটি রিকশা নিয়ে মগবাজার থেকে বেইলি রোড হয়ে রমনা পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন।

পথিমধ্যে বেইলি রোডে একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার তাদের বহনকারী রিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে রিকশাচালক আনোয়ার ইসলামসহ গুরুতর আহত হন ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার পাঁচ মাসের শিশু পুত্র ইব্রাহিম মোহাম্মদ বীন হাসান।

দুর্ঘটনার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দেওয়ার ফলে ফখরুল হাসানের ডান হাত ভেঙে যায়, তার পাঁচ মাস বয়সী সন্তানের ডান পা ভেঙে গেছে। রিকশাচালকও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া ফখরুল ও তার ছেলের মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই এখন চিকিৎসাধীন।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সাইবার পেট্রোলিংয়ের অংশ হিসেবে ভাইরাল ভিডিওটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের নজরে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার প্রাইভেটকারটির চালককে শনাক্ত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।

এর ধারাবাহিকতায় শনিবার (২০ নভেম্বর) দিবাগত সাড়ে ১২টার দিকে হাতিরঝিল থানা এলাকা থেকে (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-২২৬৩) প্রাইভেটকারটি হেফাজতে নেয় হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

রোববার (২১ নভেম্বর) ভোরে মেহেরপুর জেলা পুলিশের সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানাধীন হাট বোয়ালিয়া নতুন বাজার এলাকা থেকে তাসকিনকে আটক করে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ।

ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনার পর প্রাইভেটকারচালক কিশোর তাসকিন আহমেদ গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে যান। পরের দিন শনিবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাসকিনের মাকে নিয়ে বাসে করে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় তার দাদার বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে আবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গায় তার খালার বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকে। পরে দুই উপজেলার থানা পুলিশের সহতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ঘটনার পর হাতিরঝিল থানার মীরবাগ এলাকায় তাসকিনের বাসা থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। গাড়ির কাগজপত্র চেক করে দেখা গেছে এই গাড়ির মালিক তাসকিন বা তার পরিবারের কেউ না। ওয়ারি এলাকার কামাল নামের এক বাসিন্দা।

তাসকিনের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাসকিন আহমেদের জন্ম ২০০৬ সালে। সে হিসেবে তার বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে তার লাইসেন্স থাকার কথা না। সে রাজধানীর একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে অন্যত্র ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বাবা একজন আইনজীবী বলে আমরা জানতে পেরেছি।  

গাড়ি চালানোর সময় তাসকিন মাদকাসক্ত ছিল কি-না জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তাসকিনকে এখনো আমরা হাতে বুঝে পাইনি। আমাদের একটি টিম তাকে ঢাকায় নিয়ে আসছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি জানা যাবে এবং তার ডোপ টেস্ট করা হবে। বিষয়টি রমনা থানা তদন্ত করে আপনাদের জানাতে পারবে। কারণ এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে রমনা থানায়।

তাসকিনের বেপরোয়া গতির গাড়ির ধাক্কায় আহত ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল হাসান বলেন, বাসা থেকে আমার ছেলেকে নিয়ে রমনা পার্কে যাওয়ার জন্য রিকশা নিয়েছিলাম। বেইলি রোডে যাওয়ার পরে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে আমিসহ আমার পাঁচ মাসের শিশু সন্তান পড়ে যাই। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। রাত ১০টার দিকে চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। আমার ডান হাত ভেঙে গেছে, মাথায় আঘাত লেগেছে।

আমি অনেক কিছু ভুলে গেছি, আমার পাঁচ মাস বয়সী ছেলের ডান পা ভেঙে গেছে। তার পায়ে রোববার (২১ নভেম্বর) বিকেলে অপারেশন করা হয়েছে। আমাদের বহনকারী রিকশারচালকও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছে, সে এখন ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি আছেন। আমার ছেলেও মাথায় ব্যথা পেয়েছে ডাক্তার সিটি স্ক্যান করতে বলেছে, এখনো করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি পেশাগতকাজে ব্যস্ত থাকায় আমি আমার শিশুপুত্রকে নিয়ে ছুটির দিনে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।

** সেই গাড়ির চালক দশম শ্রেণির ছাত্র, নেই লাইসেন্স! 

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
পিএম/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।