ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লিবিয়ায় দালালের নির্যাতনে মাদারীপুরের দুই তরুণের মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
লিবিয়ায় দালালের নির্যাতনে মাদারীপুরের দুই তরুণের মৃত্যু সাকিবুল ও সাব্বির

মাদারীপুর: লিবিয়ায় দালালদের নির্যাতনে মাদারীপুরের সাব্বির খান (২১) ও সাকিবুল হাসান সবুজ (২২) নামে দুই তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

শনিবার (২০ নভেম্বর) রাতে তাদের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছায়।

ওই দুই তরুণ অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে লিবিয়ায় অবস্থান করছিলেন। লিবিয়ার অভিবাসী বন্দিশালায় দালালদের শারীরিক নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয় বলে স্বজনরা জানান।

নিহত দুই তরুণ হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য খাগদী এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে সাব্বির খান (২১) ও বড়াইলবাড়ি এলাকার মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে সাকিবুল হাসান সুরুজ (২২)।

নিহত তরুণদের স্বজন ও পুলিশের সূত্র জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় দালাল সবুজ মীরের মাধ্যমে আট লাখ টাকা চুক্তিতে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন সদর উপজেলার বড়াইল গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে সাকিবুল। চুক্তির অর্ধেক টাকা পরিশোধ হলেও বাকি টাকা ইতালি পৌঁছানোর পরে দেওয়ার কথা। তবে লিবিয়াতে পৌঁছানোর পরেই বাকি চার লাখ টাকার জন্য দালাল চক্র সাকিবুলকে একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। পরে শনিবার রাতে দালালদের নির্যাতনে মারা যান সাকিবুল।  

অন্যদিকে মধ্য খাগদী এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে সাব্বির খান চরনাছনা এলাকার দালাল কাশেম মোড়লের মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখ টাকার চুক্তিতে ছয় মাস আগে লিবিয়া পৌঁছান। এরপরে তাকেও লিবিয়ার বন্দিশালায় আটক রাখা হয়। টাকার জন্য তাকেও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালান দালালরা।

আহাজারি করতে করতে নিহত সাব্বিরের মা নাজমা বেগম বলেন, রাইতে আমি বাড়ি ছিলাম না। সেসময় ভাইর বেটি (ভাইয়ের মেয়ে) হঠাৎ ফোন দিছে, ভাবছি মায় মইরা গেছে। বাড়িতে আইসা শুনি আমার পোলা মইরা গেছে। বলেই তিনি বিলাপ করতে থাকেন।  

সাব্বিরের খালু মো. ওবায়দুর রহমান তালুকদার বলেন, সাব্বিরের মাথায় ধারালো কিছু একটা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এ কারণে সাব্বির মারা গেছে। সাব্বিরের সঙ্গে যারা ছিল, ওরা আমাগো ফোনে ভিডিও কলে সব দেখাইছে। সাব্বিরের মৃত্যুর জন্য যে কয়জন দালাল দায়ী, আমরা তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।

অন্যদিকে নিহত সাকিবুলের মেজ ভাই আরিফুর রহমান বলেন, ভাই বিএ পড়ত। পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য পাগল ছিল। তাই আমরা আর আটকাই নাই। দালালের সঙ্গে চুক্তি ছিল, লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছালে অর্ধেক টাকা দিতে হবে। পরে ইতালি পৌঁছে দিতে হবে বাকি টাকা। বডি কন্ট্রাক্ট ছিল। কিন্তু গেম হওয়ার আগেই এভাবে যে মারা যাবে, তা মানতে পারছি না। যারা আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী, আমরা তাদের বিচার চাই।

মাদারীপুরে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (অক্টোবর পর্যন্ত) মানব পাচার আইনে ৩০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তবে থামছে না দালালদের দৌরাত্ম্য।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, লিবিয়াতে মাদারীপুরের দুজন মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত নিহত তরুণদের পরিবার কোনো সহযোগিতার জন্য আসেনি। এরপরও নিহত ওই দুই পরিবারের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।