ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সন্তান জন্ম দিয়েই পরীক্ষার হলে মা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
সন্তান জন্ম দিয়েই পরীক্ষার হলে মা

বরিশাল: বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই পরীক্ষা হলে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এক স্কুলছাত্রী।

ওই ছাত্রীর মানসিক মনোবল নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা।

তবে স্কুল শিক্ষার্থীর সন্তান প্রসবের ঘটনায় বাল্য বিয়ের বিষয়টি সামনে আসায় কিছুটা বিব্রত অভিভাবকরা।

চাখার ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মো. ফারুক হোসেন স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, প্রসূতি দোলা আক্তারের আগেই বিয়ে হয়েছিল। সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। রোববারের (২১ নভেম্বর) আগের পরীক্ষাগুলো ঠিকভাবেই দিয়েছে সে। তবে রোববারের পরীক্ষা শুরুর কয়েকঘণ্টা আগে, সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে প্রসব বেদনা উঠলে চাখার ১০ শয্যা হাসপাতালের এক সেবিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেন দোলার স্বজনরা। এরপর তার সহযোগিতায় ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় দোলা। এর কিছুক্ষণ পর দোলা শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলে সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়। পরে পরীক্ষা পরিচালনা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দোলা যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

তিনি জানান, বর্তমানে ছেলে সন্তান ও তার মা দু’জনেই সুস্থ আছে। তবে বিষয়টি নিয়ে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

চাখার ফজলুল হক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের সচিব মো. জিয়াউল হাসান জানান, চাখার হাসপাতালের একজন নার্স ও দোলার স্বজনরা পরীক্ষা শুরুর কিছু সময় আগে বিষয়টি আমাদের জানায়। তার শারীরিক কথা বিবেচনা করে প্রথমে আমরা পরীক্ষায় অংশ না নিতে অভিভাবকদের বলি। কারণ হলে বসে যদি তার কোনো ধরনের শারীরিক ঝামেলা দেখা দেয় সেটি খুবই বিপদজনক হতে পারে।

তিনি বলেন, এরপর ওই শিক্ষার্থী নিজেকে সুস্থ দাবি করে পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুরোধ করে। পরে তার এক খালাতো বোনকে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে সে। এরপর সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টার নির্ধারিত সময়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের পরীক্ষা শেষ করে ওই শিক্ষার্থী।

তার মানসিক মনোবল দেখে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাই অবাক হয়েছি। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি পরীক্ষার্থীর বাবার পরিবার তেমন স্বচ্ছল নয়। ক্লাস নাইনে থাকতে ওই পরীক্ষার্থীর বিয়ে হয় বলে জানান শিক্ষক জিয়াউল হাসান।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীর স্বামী কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করেন এবং তার অন্য স্বজনরা সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে তাদের কাছে রাখেন।

দোলা আক্তার চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছিল। সে চাখারের খলিশাকোঠা গ্রামের মো. দুলাল হাওলাদারের মেয়ে। স্কুলের গন্ডি পার হতে না হতেই পরিবারের সম্মতিতে পার্শ্ববর্তী দাসের হাট (হরিদ্রাপুর) গ্রামের মো. ইউসুফ আলীর ছেলে আকাশের সঙ্গে বিয়ে হয় তার।

চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলী আজিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দোলা মেধাবী ছাত্রী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
এমএস/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।