বরগুনা: পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনা এলাকার সোনাকাটা ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে। দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করা হলে নদী হাত থেকে বাঁচতে পারেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে তালতলী উপজেলা বাসিন্দাদের ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নদী এমনি করে রূপ দেখাচ্ছে। গ্রাম রক্ষার বাঁধ না থাকায় এমন দুর্ভোগে দিন কাটে তিন শতাধিক পরিবারের। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় নদীর তীরবর্তী এসব এলাকার বাসিন্দাদের জোয়ার ভাটার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। এ এলাকার মানুষ কৃষি ও মৎস্য জীবী পেশায় নিয়োজিত। তাদের ভিটেমাটি রক্ষা করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আর সেই বাঁধ ভেঙে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রতিবছর কয়েকবার পানিতে ভাসেন তারা। জোয়ারের পানি একটু বেশি হলেই রাস্তা-ঘাট ও বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায়। নদী বেষ্টিত এলাকা হওয়া কারনে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণ পানি প্রবেশ ঠেকাতে এ গ্রামবাসীর জন্য নেই কোনো বেড়িবাঁধ। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেও মেলেনি প্রতিকার। স্থানীয় বাসিন্দা সেন্টু বিশ্বাস বলেন, বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন মানুষ এ এলাকায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখানকার মানুষের এখন প্রধান দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া শুভ সন্ধ্যা সৈকতের বিপরীত দিকে নিদ্রার চর। এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০ টি পরিবার বেরিবাঁধ না থাকার কারণে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ভাসেন। তাদের মতো এ গ্রামে আরও আড়াইশো পরিবার বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে এমন দুর্ভোগের থাকেন।
স্থানীয়রা বাসিন্দা বেল্লাল ফারাবী বলেন, নিদ্রা বাজার থেকে ফকিরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ এখন খুবই প্রয়োজন। অন্তত ৩ শতাধিক পরিবার রক্ষা পাবে। বছরের পর বছর এই ভাবে পড়ে থাকলও জনপ্রতিনিধিরা কেউ দেখে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নিদ্রার চর এলাকার জেলে মুস্তাফিজ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. দুলাল বাংলানিউজকে জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকার কারণে দিন দিন নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। এখনই যদি উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে এ নিদ্রার চর বিলীন হয়ে যাবে। এখানকার মানুষজন নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। বেরিবাঁধটা থাকলে অন্তত নিরাপদে বসবাস করা যাবে।
ইউপি সদস্য শহীদ আকন জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আগে এখানে বেড়িবাঁধ ছিল। কিন্তু সিডরের কারনে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত এখানে আর কোন বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। জিও ব্যাগ ও পাইলিংয়ের ব্যবস্থা করে নিদ্রার সুইজ গেট থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন।
সোনাকাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী বলেন, বিষয়টা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি তিনি বলছেন এখানে একটা প্রজেক্ট হবে। তারাই বেরিবাঁধ নির্মাণ করবে। কিন্তু কি প্রজেক্ট হবে তা জানা নেই।
তালতলী ইউএনও কাওসার হোসেন মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি জানিনা তবে, খোঁজ-খবর নিয়ে জানানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
এনএইচআর