রাজবাড়ী: ছোট্ট শিশু শিখা। বয়স মাত্র ১০ বছর।
শিখা রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বফুল কাউন্নার গ্রামের মদম কুমার দাস ও চন্দনা রানীর মেয়ে।
এক বছর বয়সে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন। তখন থেকেই শিখা মানুষ দেখলেই কামড়ে ও খামছে দেয়। এ জন্য তাকে পরিবারের লোকজন রশি দিয়ে বেধে রাখত। কিন্তু শিখা ওই রশি কামড়ে ছিড়ে হামাগুরি দিয়ে তার বাবা মাসহ আশপাশের লোকজনকে কামড় ও খামছি দিয়ে আহত করত।
তার কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে এজন্য তিন বছর বয়স থেকে পরিবারের সদস্যরা শিখাকে নেটের খাঁচাবন্দি করে রাখে।
শিখার মা চন্দনা শিল বাংলানিউজকে জানান, তিন ভাই-বোনের মধ্যে শিখা মেজ। তার বড় ভাই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ছোট ভাইয়ের বয়স দুই বছর। বাবা একটি সেলুনে কাজ করেন। সে টাকা দিয়েই মেয়েকে চিকিৎসার জন্য একাধিকবার ভারতে নিয়ে গেছেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। মানুষজনকে কামড়ে ও আঁচড়ে দেওয়ায় বারান্দায় একটি খাঁচা তৈরি করে শিখাকে সেখানে আটকে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে শিখাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বাড়িটি টিনের, মেঝে মাটির। ঘরের সামনে মাটির বারান্দার এক কোণে মোটা জাল দিয়ে ঘিরে রাখা খাঁচায় শিলার বাস। খাঁচার পাশেই রান্নাঘরে মা কাজের পাশাপাশি মেয়ের দেখভাল করেন।
শিখার মা চন্দনা আরও জানান, অনেক কবিরাজ, ডাক্তার দেখিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। জমানো টাকা, জমিজমা বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা করাতে পারলাম না। এখন দেশে চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন ১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা লাগে। এখন ওর চিকিৎসা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত।
এলাকাবাসীরা জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এ শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের দুঃখের শেষ নেই। দরিদ্র বাবা-মায়ের সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। তার ওপর মেয়েটির চিকিৎসা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী শরীফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি আমি জানার পর শিশুটিকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছিলাম। ৬ মাস পর পর সে ২১০০ টাকা করে পায়। কিন্তু সামান্য টাকা দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করছি।
রাজবাড়ী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বাংলানিউজকে জানান, খাঁচার মধ্যে আটকে রাখার বিষয়টি অমানবিক। এতে তার মস্তিষ্কে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সমাজসেবার অধীনে এ ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তাকে সেখানে রাখা যেতে পারে। শিশুটির যেহেতু মস্তিষ্কে সমস্যা সেহেতু তাকে একটি নিউরোসার্জনের অধীনে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সরকারিভাবে বা সমাজসেবায় এ রকম প্রতিবন্ধী শিশুদের রাখার ব্যবস্থা নেই কালুখালীতে। শিশুটি বাবা-মা ছাড়া থাকতে পারে না। এজন্য এ শিশুটিকে দূরে কোথাও রাখা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ অধিদফতরের সমন্বয়ের মধ্যে আমরা প্রতিবন্ধীদের সহায়তা দিয়ে আসছি। আশা করছি, ওই শিশুটিকেও সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
জেডএ