কক্সবাজার: মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন শহর কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্টে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এতে দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের গৌরব বহনকারী এ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সচেতন মহল বলছে, পর্যযটন শিল্প রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করতে এসব নানা অনিয়ম রোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি জরুরি। অন্যথায় একটা সময় এসে কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে পর্যটকরা।
‘একটি রিসোর্টে উঠলাম। এটি কক্সবাজারের কলাতলী থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে। কাপল রুম সাড়ে পাঁচ হাজার এক রাত। মনে করেছিলাম অন্তত থ্রি স্টার মানের হবে। কিন্তু এসে দেখি দুজন থাকা কষ্টের। মাগরিবের পর মশার যন্ত্রণাই অতিষ্ঠ। দুপুরে এক প্লেট আলু ভর্তার দাম রেখেছে ৩০০ টাকা। দুই পিস কোরাল মাছের দাম রেখেছে ৭০০ টাকার বেশি। খেয়ে বমি করতে করতে কাহিল। কতদিন আগের আল্লাহই জানে। ’
নিজের ফেসবুক ওয়ালে এসব ক্ষোভের কথা লিখেছেন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা এক সংবাদকর্মী।
শুধু তাই নয়, তিনি আরও লিখেন, ‘কলাতলী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কোরাল রেস্টুরেন্ট। এখানে এক পিস মুরগির দাম ৩০০ টাকার বেশি। যেখানে এক কেজি লইট্টা মাছের দাম ৭০-৮০ টাকা। সেখানে ছোট ছোট ১০ পিসের লইট্টা ফ্রাই ৩০০ টাকা। একটা ডাবের দাম ১২০ টাকা। ’
শুধু কোরাল রেস্টুরেন্ট নয়, চার শতাধিক রেস্তোরাঁর বেশির ভাগে চলছে এ গলাকাটা বাণিজ্য ও পর্যটক হয়রানি।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট টুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া ‘কয়লা রেস্টুরেন্ট’। এ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন অনেক পর্যটক।
কক্সবাজারে বেড়াতে এসে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রেজাউল আমিন মোরশেদ এ প্রতিবেদককে জানান, শুধু গলাকাটা বললেই কম হবে, রীতিমতো অবাক হয়েছি ‘কয়লা রেস্টুরেন্টে’ এক বাটি মুগ ডালের দাম রাখা হয়েছে সাড়ে ৩০০ টাকা। অথচ এ মানের অন্য রেস্টুরেন্টে এক বাটি মুগ ডালের দাম নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। শুধু ডাল নয় এ রেস্টুরেন্টে সবকিছুরই বাড়তি দাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কোরাল রেস্টুরেন্ট বা কয়লা রেস্টুরেন্ট নয়, কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, জোন, বিচ এলাকা, ইনানীসহ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন স্থানে যে চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে এর মধ্যে বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।
বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে বার বার তাগাদা দেই, কিন্তু কার কথা কে শুনে।
বিশেষ করে সৈকতের আশপাশে যেখানে পর্যটকের ভিড় বেশি থাকে এসব এলাকার রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসছে বেশি। যোগ করেন তিনি।
এ অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে মত দেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কানন পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরাও প্রায়ই শুনি কিছু কিছু রেস্তোরাঁয় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। এতে ভ্রমণে আসা পর্য়টকদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। এটি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের জন্য সুখকর বিষয় নয়।
ব্যবসায়ীদের এসব অনিয়ম রোধে প্রশাসন কঠোর না হলে একটা সময় গিয়ে কক্সবাজারে পর্যটকের হার কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান।
তিনি বলেন, শুধু রেস্তোরাঁগুলোতে নয়, মৌসুমে বেশির ভাগ আবাসিক হোটেলেও গলাকাটা দাম আদায় করা হয়। এখনই সময় পর্যটনের প্রসারে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের কিছু কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে প্রায়ই আসে। রেস্টুরেন্টে বাড়তি দাম নেওয়াসহ যে কোনোভাবে কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের খবর এলেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সেসব অসাধু ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
এসবি/আরবি