গণতন্ত্র থেকে পিছু হটার তালিকায় নাম উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের। আর সেই তালিকায় বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার উপাধি ‘হাইব্রিড’ ও ‘কর্তৃত্ববাদী’।
সুইডেনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ) ‘২০২১ সালের বৈশ্বিক গণতন্ত্র পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। সোমবার স্টকহোমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে আইডিইএ বলেছে, কিছু হাইব্রিড ও কর্তৃত্ববাদী দেশে নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ওই নির্বাচনগুলো পুরোপুরি প্রতিযোগিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক, স্বাধীন বা অনিয়মমুক্ত হয় না।
প্রতিবেদনে বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলা হয়, কভিড মহামারির মধ্যে বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশ ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী কৌশল অনুসরণ করছে। অন্যদিকে কর্তৃত্ববাদী শাসনগুলো নিজেদের ক্ষমতা আরো সুসংহত করছে।
বিশ্বের ১০০ দেশ নিয়ে আগামী মাসে গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তার আগে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে পিছু হটা দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে। আইডিইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই বছর আমরা প্রথমবারের মতো পিছু হটা দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। তবে আমাদের তথ্য-উপাত্ত বলছে, গণতন্ত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হটা শুরু হয়েছে অন্তত ২০১৯ সাল থেকেই। ’
যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক যাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানানোকে। ট্রাম্প ও তার মিত্রদের উসকানিতে সমর্থকরা সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল আক্রমণ করে।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির দৃশ্যমান অবনতিকেই অন্যতম বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আইডিইএ মহাসচিব কেভিন ক্যাসাস-জামোরা। এ প্রসঙ্গে তিনি ২০২০
সালে মিয়ানমার, পেরু, ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ ছাড়াই সহিংস প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
আইডিইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বিশ্বে গণতন্ত্র থেকে পিছু হটা দেশের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশগুলো ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভেনিয়ার মতো দেশে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। গত বছর গণতন্ত্র থেকে পিছু হটা দেশগুলোর তালিকায় ছিল ইউক্রেন ও উত্তর মেসিডোনিয়া। ওই দেশ দুটির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবারের প্রতিবেদনে তাদের নাম পিছু হটা দেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এই মহাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন বাড়ছে। আফগানিস্তান, হংকং ও মিয়ানমারের নানা ধরনের প্রভাব পড়ছে।
প্রতিবেদনে ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় উগ্র জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতির সামরিকীকরণসহ এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে চীনের প্রভাবে স্বৈরাচারীরা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এতে শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক মডেল ঝুঁকিতে পড়ছে।
প্রতিবেদনে অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে মহামারির সময় ছাড়াও রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোতে ১৯৭৫ সাল থেকে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছে।
আইডিইএর বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাকে ‘হাইব্রিড’ ও ‘কর্তৃত্ববাদী’ হিসেবে কেন দেখানো হলো, জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়নে গণতন্ত্রকে চারটি ধাপে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ চারটি ধাপের তৃতীয়টি হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী, হাইব্রিড বা দুর্বল গণতন্ত্র। চতুর্থ ধাপে যেসব দেশ থাকে সেখানে গণতন্ত্র একেবারেই নেই। তিনি বলেন, ‘তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক দিন ধরেই চলছে। গণতন্ত্র আছে এবং গণতন্ত্র নেই—এর মাঝামাঝি আছি। ’
শাহদীন মালিক বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী বা হাইব্রিড গণতন্ত্রের দেশগুলোতে প্রথম দিকে তেমন হানাহানি হয় না। তবে ১০ থেকে ১৫ বছর যাওয়ার পর হানাহানি, সহিংসতা বাড়তে থাকে। আমার আশঙ্কা, আমরা ওই হানাহানির প্রথম ধাপে পৌঁছে গেছি। এবারের ইউপি নির্বাচনে তারই প্রতিফলন দেখছি। সামনের নির্বাচনগুলোতে সহিংসতা আরো বাড়বে বলেই মনে হয়। ’ সৌজন্যে কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
নিউজ ডেস্ক